সাংবাদিকতা পেশার ইতিহাসে এক ভয়াবহ ও বেদনাদায়ক স্মৃতি হয়ে আছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির নির্মম হত্যাকাণ্ড। রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের একটি ভাড়া বাসায় ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে এই দম্পতিকে খুন করা হয়। দীর্ঘ ১৩ বছর পার হলেও এখনো এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হয়নি। বরং সময়ের পর সময় পার হয়ে শুধু তদন্তের মেয়াদই বাড়ছে।
সর্বশেষ হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত টাস্কফোর্সকে আরও ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ।
এর আগে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট এক আদেশে র্যাবের কাছ থেকে মামলার তদন্তভার সরিয়ে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি টাস্কফোর্সের হাতে তদন্তভার হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে বলা হয়, ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে হবে। তবে সময় পার হয়ে গেলেও সেই প্রতিবেদন জমা পড়েনি। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষ আরও নয় মাস সময় চাইলেও আদালত ছয় মাস সময় মঞ্জুর করেন এবং ২২ অক্টোবর পরবর্তী আদেশের তারিখ নির্ধারণ করেন।
ঘটনার পরপরই নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেন। প্রথমে থানা পুলিশ, পরে ডিবি এবং সর্বশেষ হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল র্যাব এই মামলার তদন্তভার নেয়। একাধিকবার দায়িত্ব পরিবর্তন হলেও এত বছরেও এই তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
র্যাব দায়িত্ব পাওয়ার পর ফরেনসিক আলামত যুক্তরাষ্ট্রে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। তবে কোনো কার্যকর তথ্য বা ফলাফল পাওয়া যায়নি। আদালতে দায়ের করা বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়, “তদন্ত চলছে”। বাস্তবে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি ছিল না।
সরকার পরিবর্তনের পর মামলার তদন্ত আবারও পরিবর্তন করে পিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পিবিআই একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তা থেকেও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।
টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে আদালতে দাবি করা হয়, তদন্ত সংশ্লিষ্ট কিছু নথি হারিয়ে গেছে বা পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি কিছু নথি ডিবি হেফাজতে আগুনে পুড়ে গেছে বলেও জানানো হয়। তবে এই তথ্যকে “ভুল ও বিভ্রান্তিকর” বলে প্রত্যাখ্যান করে ঢাকার মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, ডিবির কোনো নথি আগুনে পুড়েনি।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফও সাংবাদিকদের বলেন, “নথিপত্র পুড়ে যাওয়ার সংবাদ সঠিক নয়, এটি বিভ্রান্তি তৈরি করেছে।”