বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার ‘জিরো টলারেন্স’ বা শূন্য সহিষ্ণুতার কথা বলা হলেও মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। জনমনে প্রশ্ন জেগেছেÑএই সরকার আদৌ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম কি না? গত আট মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চুরি-ডাকাতি, খুন, রাহাজানি, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে রাস্তা অবরোধ, ভাঙচুর, লুটপাটÑএসব পরিস্থিতি জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, আর সরকারের ভাবমূর্তি হচ্ছে প্রশ্নবিদ্ধ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পাশাপাশি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর যৌথ সাঁড়াশি অভিযান সত্ত্বেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না। বরং শোনা যাচ্ছেÑদলীয় পরিচয়ে অপরাধীদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ, যা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে কেবল স্লোগানে পরিণত করে। অপরাধী যেই হোক, তার পরিচয় নয়, বিচার হোক অপরাধের ভিত্তিতেÑএটাই হওয়া উচিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মূল নীতি। বিশেষ করে যখন ঢাকায় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন চলছিল, তখন দেশের বিভিন্ন শহরে দুষ্কৃতিকারীরা চালিয়েছে ভাঙচুর ও লুটপাট। গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদ করার আড়ালে এসব সহিংসতা শুধু অমানবিকই নয়, বরং আমাদের সহমর্মিতা ও নৈতিক অবস্থানকে কালিমালিপ্ত করেছে। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা-ব্যবস্থা ও নীতিগত দৃঢ়তা নিয়ে ভুল বার্তা গেছে। সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতেই হবে। তবে সেটি যেন দলমত নির্বিশেষে হয়। পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক চাপমুক্ত করে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সক্ষম করে তোলা এখন সময়ের দাবি। একইসঙ্গে সুশীল সমাজ ও নাগরিকদেরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারের এখন প্রয়োজন শূন্য সহিষ্ণুতা নীতির বাস্তব রূপায়ণ। কথার চেয়ে কাজেই প্রমাণ দিতে হবেÑআইনের শাসনই সর্বোচ্চ, আর অপরাধের কোনো দলীয় রং নেই।