ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও আনন্দঘন পরিবেশে বিপুল সংখ্যক ভক্ত ও দর্শনার্থীদের পদচারনায় নাটোরের লালপুরে ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোঁসায় আশ্রমে দুই দিনব্যাপী নবান্ন উৎসব সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) আশ্রম কমিটির সভাপতি শ্রী সঞ্জয় কুমার কর্মকারের সভাপতিত্বে ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোঁসায়ের আবির্ভাব ও জীবন চরিত্রের উপর আলোচনা ও শব্দ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। নবান্ন উৎসবে উপস্থিত ছিলেন লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেদী হাসান, লালপুর সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন মাহবুব , লালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ নুরুজ্জামান, নাটোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খগেন্দ্রনাথ, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট প্রসাদ কুমার তালুকদার বাচ্চা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত সরকার, গোসাই আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কুমার সাংগঠনিক সম্পাদক আসিস কুমার সরকার সুইট, শ্রী গনেশ চন্দ্র দাস প্রমুখ। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ভক্ত বৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী উপস্থিত ছিলেন। নানা আনুষ্ঠানিকতায় মঙ্গলবার দুপুরে ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। আশ্রমের সভাপতি সঞ্জয় কুমার কর্মকার জানান আশ্রমের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী নবান্ন উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা বুধবার সন্ধ্যায় সম্পন্ন হয়েছে। আশ্রমের প্রধান সেবায়েত শ্রী পরমানান্দ সাধু জানান, বাংলা ১২১৭ সালে উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে দুড়দুড়িয়ার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের গহিন অরণ্যে একটি বটগাছের নিচে আস্তানা স্থাপন করেন ফকির চাঁদ বৈষ্ণব। এখানেই সাধু ধ্যান-তপস্যা ও বৈষ্ণবধর্ম প্রচার আরম্ভ করেন। প্রতি বছর দোলপূর্ণিমা, গঙ্গাস্নান ও নবান্ন উৎসব উপলক্ষে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত, সাধক সমবেত হন। সাধু ফকির চাঁদ বৈষ্ণবের মৃত্যুর পর নওপাড়ার জমিদার তারকেস্বর বাবু তার (সাধুর) স্মরণে সমাধিটি পাকা করে দেন। এছাড়াও ভক্তদের সুবিধার্থে ৬৮ বিঘা জমি ও শান বাঁধানো বিশাল দুটি পুকুর দান করেন। আশ্রম চত্বরে দালানকোঠা নির্মাণেও তিনি সহযোগিতা করেন। আশ্রমের প্রবেশ পথে রয়েছে ময়ূর, বাঘ ও বিভিন্ন প্রাণীর মূর্তি এবং লতাপাতা কারুকার্যখচিত সুবিশাল ফটক। প্রধান দ্বার প্রান্তে ডান পাশে রয়েছে ভক্ত সাধু ও সাধু মাতাদের আবাসন। বাম পাশে রয়েছে ৬ জন সাধুর সমাধি মন্দির। একটু সামনেই রয়েছে শ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণবের চারকোনা প্রধান সমাধি স্তম্ভ। বর্গাকৃতির ৪০ ফুট সমাধি সৌধের রয়েছে আরেকটি ৩০ ফুট গৃহ। এর একটি দরজা ছাড়া কোনো জানালা পর্যন্ত নেই। মূল মন্দিরে শুধু প্রধান সেবায়েত প্রবেশ করেন। কথিত আছে, মন্দিরের মধ্যে সাধু ফকির চাঁদ সশরীরে প্রবেশ করে ঐশ্বরিকভাবে স্বর্গ লাভ করেন। তার শবদেহ দেখা যায়নি। পরিধেয় বস্ত্রাদি সংরক্ষণ করে সমাধি স্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। গম্বুজ আকৃতির সমাধির উপরিভাগ গ্রিল দিয়ে ঘেরা রয়েছে। ঘরের দেয়াল ও দরজায় বিভিন্ন প্রাণী, গাছ, লতাপাতা খচিত কারুকার্য শোভা পাচ্ছে। সমাধির মাত্র পাঁচ গজ দূরে রয়েছে বিশাল আকৃতির এক কুয়ার একটি সিঁড়ি পথ রয়েছে পাশের রান্না ঘরের সঙ্গে সংযুক্ত। এই সিঁড়ি পথে সাধুগণ স্নানে যেতেন এবং রান্নাসহ পানিয় জল সংগ্রহ করতেন। বর্তমানে কুয়ার পানি ব্যবহার অযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। আশ্রম চত্বরে রয়েছে ১৪১ জন ভক্ত সাধুর সমাধি। প্রধান সমাধিগুলোর কয়েকটি স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের পানসিপাড়া- রামকৃষ্ণপুর গ্রামে বাংলা (৩২৭ বছর পূর্বে) শ্রী শ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোসাইজির আশ্রম স্থাপিত হয়। আশ্রমটি ৩২ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দুই দিনব্যাপী নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ অনুষ্ঠান উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার ভক্তের আগমন ঘটে। তিন শতাব্দীর স্মৃতিবাহী ফকির চাঁদ গোসাই আশ্রম দেশ-বিদেশ থেকে আসা দর্শনার্থীদের কোলাহলে মুখরিত আশ্রমটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। ভক্তবৃন্দের প্রত্যাশা আগামী দিনে সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় এই প্রতিষ্ঠানটি আরো সমৃদ্ধি লাভ করবে।