রাজশাহীতে নতুন ভোটারদের ছবি তোলার জন্য এভাবেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
গতকাল সোমবার সকাল থেকে রাজশাহী নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের বালাজান নেসা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নতুন ভোটারদের ছবি তোলা হচ্ছিল। সেখানেই কথা হয় নতুন ভোটার সাফিয়া খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, চারঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পা ব্যাথা হয়ে গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত ঘরে আসতে পেরেছি। এত কষ্ট করে ভোটার হচ্ছি, জাতীয় পরিচয়পত্র পেলেই স্বস্তি।
লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি বলেন, আমিও সকাল ৯টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি। কিছুক্ষণ পরে আমার ছবি তোলার সুযোগ হবে। রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে মাথা আর পা ব্যাথা হয়ে গেল। এখানে নিয়ম হচ্ছে যে পরীক্ষার্থী আর অসুস্থ ব্যক্তি লাইনে না দাঁড়িয়েই ভেতরে ঢুকতে পারবে। অনেকে অসুস্থ কিংবা পরীক্ষার্থী না হয়েও এ সুযোগটা নিচ্ছে। ফলে আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদেরও লম্বা লাইন দেখা গেল। সেখানে লাইনে ছিলেন নতুন ভোটার আরিফ হোসেন। তিনি জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি এসেছেন। এরপর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ ভেতরে ঢুকলে সে আর ১৫ মিনিটের আগে বের হচ্ছে না। আরিফ বলেন, ‘ছবি তোলা বুথের সংখ্যা যদি আরও বাড়িয়ে দিত, তাহলে তাড়াতাড়ি হতো।
ভেতরে ঢুকে দেখা গেল পাঁচটি বুথে নতুন ভোটারের দশটি আঙ্গুলের ছাপ, আইরিস, স্বাক্ষর নেওয়ার পর ছবি তোলা হচ্ছে। নগরের রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার রায় নিজেই কাগজপত্র মিলিয়ে দেখতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তিনি জানালেন, এই কেন্দ্রে মোট ৪০০ জন নতুন ভোটারের নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করা হবে। একেক জনের জন্য ১২ থেকে ১৩ মিনিট সময় লাগছে। পাঁচটি বুথে কাজ চললেও বাইরে লাইন হয়ে যাচ্ছে।
নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, ভোটারের দশটি আঙ্গুলের ছাপ, আইরিস, স্বাক্ষর নেওয়া ও ছবি তোলা ছাড়াও ভোটারের বাংলা ও ইংরেজিতে নামসহ ২০ ধরনের তথ্য পূরণ করতে হচ্ছে সার্ভারে। এতে সময় বেশি লাগছে। তাছাড়া প্রায় ২০ ভাগ নারীর হাতের আঙ্গুলের ছাপ নিতে সমস্যা হচ্ছে। ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট উঠে যাওয়া কিংবা ঘামের কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। তখন সময় আরও বেশি লাগছে।
তিনি আরও জানান, ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা নতুন। তাদের প্রথম প্রথম কাজেও সমস্যা হচ্ছে। তারা সময় বেশি নিচ্ছেন। তখন বাইরে লাইন দীর্ঘ হয়ে গেলে নির্বাচন অফিসের নিজস্ব লোকদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। এর বাইরে সার্ভার সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
রাজশাহী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় জানিয়েছে, রাজশাহী মহানগর ও জেলার ৯ উপজেলায় এবার প্রায় ১ লাখ ৪ হাজার জন নতুন ভোটার নিবন্ধিত হয়েছেন। পর্যায়ক্রমে সবার ছবি তোলা হবে। এ কার্যক্রম চলবে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। লম্বা লাইনে না দাঁড়ানোর জন্য ভোটারদের পর্যায়ক্রমে ছবি তোলার সময় জানানো হলেও তারা তা না মেনে আগেভাগে চলে আসছেন বলে জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোতাওয়াক্কিল রহমান।
তিনি বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহকারীরা নতুন ভোটারদের ছবি তোলার সময় জানিয়ে দিচ্ছেন। সব ভোটার যাতে একসঙ্গে কেন্দ্রে না আসেন সে জন্য এই পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে। কিন্তু ভোটাররা মনে করছেন আগে গেলে আগে কাজ শেষ হয়ে যাবে। তাই তারা সবাই একসঙ্গে চলে আসছেন। ফলে তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।