৩ দিন পরও মামলা হয়নি

মীমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ পরিবারের

এফএনএস (মাহবুব খান বাবুল; সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : | প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০১:৪১ পিএম
মীমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ পরিবারের

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী শিশু খাদিজা (০৬) প্রকাশ মীমকে দুই আনা স্বর্ণের জন্য পরিকল্পিত ভাবে হত্যার অভিযোগ করছেন নিহতের পরিবারও স্বজনরা। গত দুইদিন ধরে হত্যার নানা আলামত বেরিয়ে আসছে। তাই ফুঁসে উঠছেন গ্রামবাসী। মীমের পরিবার বলছেন, প্রতিবেশী মনসুর (৫৩) আনসার (৫০) ও জান্নাতরা (১৭) এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন। রাতভর ঘরের ভেতরে মাটিচাপা ও পরের দিন ভোরে পুকুর পাড় সংলগ্ন পানিতে মীমের লাশ ফেলে গেছে হত্যাকারীরা। বুধবার সকালেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে জান্নাত ও তার বাবা চাচারা। পুলিশ বলছেন, হত্যা নয় পানিতে ডুবে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। তবে ময়না তদন্তে মূল কারণ বেরিয়ে আসবে। উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের কালিশিমুল গ্রামে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। মীম কালিশিমুল গ্রামের আলী ইসলামের কন্যা। পুলিশ, সরজমিন অনুসন্ধান, নিহতের পরিবার ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, মূলত দুই আনা স্বর্ণের কানের দুলের জন্যই খুন হয়েছে শিশু মীম। কালিশিমুল গ্রামের দরিদ্র আলী ইসলামের শিশু কন্যা মীম পাকশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। দুইকানে দুই আনা স্বর্ণের দুটি দুল পড়ে অন্যান্য দিনের মত গত মঙ্গলবারে স্কুলে গিয়েছিল মীম। দুপুরের দিকে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরলে প্রতিবেশী আনসর মিয়ার মেয়ে জান্নাত মীমকে ফুঁসলিয়ে খেলতে নিয়ে যায়। এরপর আর বাড়ি ফিরেনি মীম। শ্রম বিক্রি করে জীবন-যাপন করা আলী ইসলাম বিকেলে বাড়ি ফিরলে স্ত্রী জানান মীমকে পাওয়া যাচ্ছে না। সন্তানকে খুঁজতে চারিদিকে দৌঁড়তে থাকেন আলী ইসলাম। গভীররাত পর্যন্ত কোথাও খুঁজে পাননি মীমকে। দুই সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান নিখোঁজে ভেঙ্গে পড়েন পিতা মাতা ও স্বজনরা। রাতেই শিশু মীম নিখোঁজের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিসহ প্রচার করা হয়। ঘুরেফিরে করা হয় মাইকিং। তারপরও সন্ধান মিলেনি মীমের। পরের দিন বুধবার সকালে মিমদের পুকুরের পাড় সংলগ্ন পানিতে পুতুলের মত কি যেন পড়ে থাকতে দেখে কয়েকজন শিশু। সেখানে হাজির হয়ে মীমের মরদেহ সনাক্ত করেন পরিবার। তবে মীমের কানের স্বর্ণের দুটি দুল, গলার ইমিটেশনের চেইন ও পায়ের সেন্ডেল দুটি নেই। মীমের মুখের ভেতরে শক্ত ধরণের কাঁদায় ভরা। মীমের মা নাজমা বেগম পিতা আলী ইসলামসহ স্বজনদের তাৎক্ষণিক অভিযোগ এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। কানের দুল ২টি নিয়ে অন্য কোথাও হত্যা করে এখানে ফেলে গেছে। পুলিশ ওইদিনই মীমের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করেন। কাছের প্রতিবেশী হয়েও মীমের জানাজায় যাননি মনসুর আনসর। উল্টো পালিয়ে গেছেন তারা। ঘটনার দুইদিন পর বৃহস্পতিবার থেকে একে একে বেরিয়ে আসছে হত্যাকান্ডের নানা আলামত। বুধবার রাত থেকে মনসুর আনসরদের বাড়ির মালামাল সরাতে থাকে।  এতে সন্দেহ আরো ঘনিভূত হয় গ্রামবাসীর। শুক্রবার সকাল থেকে মীমের পরিবারসহ গোটা গ্রামবাসী ফুঁসে উঠেছে। মীমদের বাড়িতে নারী পুরূষ ভীড় করছেন। মীমদের ফার্ম  মোরগ পালনের) ঘরে একটি গর্ত পাওয়া গেছে। মীমের বাবা আলী ইসলাম, প্রতিবেশী তাজুল ইসলাম (৫৫), শির ইসলাম (২৬), নুরূল হক (৫৫) ও মনোয়ারা বেগম (৩৫) সহ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি  বলেন, মনসুরের মেয়ে জান্নাত বেপরোয় উশৃঙ্খল জীবন-যাপন করে আসছে। চুরির একাধিক ঘটনায় জান্নাতের বিচার হয়েছে সালিস সভার মাধ্যমে। মনসুরদের আশপাশের লোকজন জানিয়েছেন, জান্নাত মঙ্গলবার দুপুরে মীমকে খেলার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। এক সময় মীমের কান থেকে দুল ও গলার চেইন নেয়ার চেষ্টা করলে মীম দস্তাধস্তি করে। মীমকে চেপে ধরে জিনিষ গুলো খুলে নিয়ে যায়। চিৎকার করার চেষ্টা করলে মুখ চেপে ধরে মীমকে জান্নাতদের ঘরে নিয়ে যায়। মুখ চেপে ধরে মীমকে খুন করে। এ ঘটনায় জান্নাতের পিতা চাচারা সহযোগিতা করেন। গভীররাতে ঘরের ভেতরে গর্ত করে মীমকে মাটিচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। সিদ্ধান্ত নিতে তারা অস্থির হয়ে পড়ে। শেষ রাতে মাটিচাপা সরিয়ে মীমের লাশ তুলে ফেলে। বুধবার ভোরে লাশটি কৌশলে মীমদের পুকুর পাড় সংলগ্ন পানিতে ফেলে চলে যায়। মূলত কানের দুলের জন্যই জান্নাতরা মিমকে খুন করেছে। খুনের পর তারা সারারাত ছটফট করেছে। মীমের মুখের ওই কাঁদা ঘরের গর্তের মাটিই। আমরা হত্যা মামলা দিতে চাইলে পুলিশ নিচ্ছে না। জিডিতে স্বাভাবিক মৃত্যু  লিখে ময়না তদন্ত করার কারণও বুঝতে পারছি না। পুলিশ বলছেন মীম পানিতে ডুবে মারা গেছে। পাকশিমুল ইউনিয়নের বিট অফিসার ও এই বিষয়টির তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই জাহিদ আহসান বলেন, শিশু মিম খেলতে গিয়ে পুকুরের পানিতে ডুবে মারা গেছে। মীমের শরীরের কোথাও আঘাতের কোন চিহ্ন নেই। গলায় শ্বাসরোধের কোন আলামত নেই। চিকিৎসকও আঘাতের কোন চিহ্ন না পাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন। মীমের মুখের কানের দুল, গলার চেইন না থাকা ও মুখের ভেতরে শক্ত কাঁদা থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, পানির নীচে যাওয়ায় হয়তবা মুখে কাঁদা প্রবেশ করেছে। এই ঘটনায় ইউডিসহ কোন মামলা হয়নি। শুক্রবার দুপুরে সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রফিকুল হাসান বলেন, এই ঘটনায় মামলা করতে কেউ আমার কাছে এখনো আসেনি। ঘটনার দিন আমি থানায় ছিলাম না। তবে জমি সংক্রান্ত বিরোধ থাকায় ভয়ে পাশের বাড়ির লোকজন বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। বিষয়টি আরো গভীরে তদন্ত করার জন্য আমি লোক পাঠাচ্ছি।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে