২০০৩ সালে যাত্রা শুরু করা স্কাইপ ছিল ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভয়েস ও ভিডিও কলিংয়ের পথপ্রদর্শক। এটি ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল) প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাশ্রয়ী মূল্যে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের সুযোগ করে দিয়েছিল। এর ফলে দূরবর্তী স্থানে থাকা পরিবার, বন্ধু এবং সহকর্মীদের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ সম্ভব হয়েছিল। স্কাইপের এই উদ্ভাবনী সেবা দ্রুতই জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং ২০১১ সালে মাইক্রোসফট ৮.৫ বিলিয়ন ডলারে স্কাইপ অ্যাপটি কিনে নেয়।
তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। নতুন প্রতিযোগীদের আবির্ভাব এবং প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মেলাতে স্কাইপ কিছুটা পিছিয়ে পড়ে। বিশেষ করে, কোভিড-১৯ মহামারির সময় জুম, গুগল মিট এবং স্ল্যাকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়, যা স্কাইপের ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমিয়ে দেয়। তাই এখন মাইক্রোসফট এই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে তাদের যোগাযোগ সেবা পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রায় দুই দশক ধরে ইন্টারনেটভিত্তিক অডিও ও ভিডিও কলিং সেবা প্রদানকারী স্কাইপ অ্যাপটি আগামী মে মাসে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে যাচ্ছে। তবে স্কাইপ বন্ধ হওয়ার পর ব্যবহারকারীরা তাদের স্কাইপ অ্যাকাউন্টের তথ্য দিয়ে মাইক্রোসফট টিমসে সাইন ইন করতে পারবেন। এতে তাদের কনট্যাক্ট লিস্ট ও মেসেজ হিস্ট্রি সংরক্ষিত থাকবে। কিন্তু স্কাইপের মাধ্যমে সরাসরি ফোন নম্বরে কল করার সুবিধা টিমসে থাকবে না। মাইক্রোসফট টিমস হলো একটি সমন্বিত যোগাযোগ ও সহযোগিতা প্ল্যাটফর্ম, যা চ্যাট, ভিডিও মিটিং, ফাইল শেয়ারিং এবং অন্যান্য ফিচার প্রদান করে। এটি বিশেষ করে ব্যবসায়িক পরিবেশে ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং স্কাইপের তুলনায় আরও উন্নত সেবা প্রদান করে। মাইক্রোসফট জানিয়েছে, বর্তমান স্কাইপ ব্যবহারকারীরা তাদের ক্রেডিট ও সাবস্ক্রিপশন পরবর্তী নবায়ন পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন, তবে নতুন গ্রাহকদের জন্য এই সুবিধা আর থাকবে না।
মাইক্রোসফট এখন সম্পূর্ণরূপে টিমসকে কেন্দ্র করে কাজ করবে। ২০২০ সালে টিমসের একটি ব্যক্তিগত সংস্করণ চালু করা হয়েছিল এবং মাইক্রোসফট জানিয়েছে যে, তারা টিমসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের আরও উন্নত এবং আধুনিক যোগাযোগ সুবিধা প্রদান করবে। টিমসের মাধ্যমে মাইক্রোসফট একটি একক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে চায়, যেখানে ব্যবহারকারীরা এক জায়গায় কাজের এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন। স্কাইপের বিদায় নেওয়া অবশ্যই অনেকের জন্য নস্টালজিক হতে পারে, কিন্তু প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন আসাটা স্বাভাবিক।