ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনে কাক্ষিত পানি না পাওযার অভিযোগ তুলছে স্বয়ং উপকার ভোগীরা।বর্তমানে কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত সাবমারসিবল পাম্পে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করছে এ সি আই কোম্পানির(এসিআই-৩ কিউএম-১.০-৩/১৪)সাবমারসিবল মোটর। ১ হরর্স পাওয়ার এ মোটরে ০.৭৫ কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পূর্ণ হওয়ার পরও নেই পানির ফোর্স বা গতি। যে কারণে কাক্ষিত পানি পাচ্ছে না উপকার ভোগীরা। একই সাথে নতুন স্থাপিত এই পাম্প গুলোর পানিতে রয়েছে গোবরের গন্ধ। ফলে ওই পানি ব্যবহারে রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। পাম্প স্থাপনের সময় সিডিউলে ভেন্টানাইট পাউডার ব্যবহারের কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তা না করে উপকার ভোগীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত কাঁচা গোবর নিয়ে তা নলকূপ উপস্থাপনে ব্যবহার করছেন।
উপকারভোগীদের অভিযোগ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কারসাজি এবং উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের গাফলতিতে নিম্নমানের মোটর ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহারের কারণে এমনটি ঘটছে। আর এসব দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা কালীগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী জেসমিন আরা সবকিছু জেনে নিশ্চুপ। সমগ্রদেশ নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে ১৩২ টি সাবমারসিবল যুক্ত গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে কালীগঞ্জ উপজেলায়। এ উপজেলায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখ থেকে সাবমারসিবল স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ভুক্তভোগীরা জানান,আমি সরকারের ভর্তুকি দেওয়া একটি সাবমারসিবল পাম্প নিয়েছি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর ঠিকাদার আমার বাড়িতে পাম্পটি স্থাপন করে দিয়েছেন। পাম্প স্থাপনের সময় আমি প্রায় দুই ট্রলি কাচা গোবর মিস্ত্রিদের দিদয়েছিলাম পাইলিং করনের জন্য।পরবর্তীতে অনেকদিন ধরে পানিতে গোবরের গন্ধ ছিল। আমার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো,পাম্পটিতে যে পরিমাণ পানি ওঠার কথা সেই পরিমাণ পানি উঠছে না। আমার প্রতিবেশিদের একই গভীরতার সাবমারসিবল স্থাপন করা আছে ব্যক্তিগত ভাবে। সেখানে প্রচুর পানি উঠলেও আমার পাম্পে উঠছে না। অফিসে মৌখিক ভাবে জানানোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিয়ষটি আমলে নেয়নি। তবে পাম্প স্থাপনকারী মিস্ত্রীরা আমাকে বলেছেন,এ পর্যন্ত যতগুলো পাম্প স্থাপন করেছি সবগুলোর একই অবস্থা। আপনার ওখানে যে মোটর লাগানো হয়েছে সেটিতে সমস্যা থাকতে পারে। অনেক সময় ঠিকাদাররা মোটর বিশেষ ভাবে তৈরি করে সেগুলো খরচ কমানোর জন্য ব্যবহার করে থাকেন। সেরকম কিছু ঘটলো কিনা আল্লাই ভাল জানে। তবে আমি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমার সাবমারসিবল পাম্পটি ঠিক করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি কালীগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের নিকট।
কালীগঞ্জ উপজেলায় ১৩২ টি সাবমারসিবল যুক্ত গভীর নলকূপ স্থাপনে কাজ করছে সাদিয়া এন্টার প্রাইজ নামের ঠিকাদারী একটি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তাদের ব্যবস্থাপক সুমন হোসেন জানান,এই মোটরের পানির ফোর্স এমনই হবে। কারোর কোনো অভিযোগ থাকলে আমাদের জানান, আমরা সেটি সমাধানের চেষ্টা করব।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর সহকারী প্রকৌশলী জেসমিন আরা দৈনিক আমার দেশ কে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পানির লেয়ার নেমে যাওয়ায় এমনটি হতে পারে। দেখবেন এই কলেই বর্ষা মৌসুমে প্রচুর পানি ওঠবে বলে তিনি জানান।পাম্প স্থাপনে গোবরের ব্যাবহার এবং ব্যবহারিত মোটরের মান ঠিক আছে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী আকমল হোসেন এ ব্যাপারে বলেন,সেখানে কি সমস্যা হচ্ছে সেটি দেখার জন্য আমি এখনই বলে দিচ্ছি। প্রয়োজনে সবগুলো পাম্পের মোটর পরিবর্তন করে দিতে বলব। ইতিমধ্যে যেগুলো লাগানো হয়েছে সেগুলো ঠিক না করে দেওয়া পর্যন্ত পরবর্তী সব কাজ বন্ধ থাকবে বলে তিনি যোগ করেন।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম দৈনিক আমার দেশ কে বলেন,নতুন স্থাপিত সাবমারসিবল পাম্পে পানি কম উঠার ব্যাপারে আমি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারকে ডেকে জেনে দেখি। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হলে নেওয়া হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।