চলচ্চিত্র অনুদানের নীতিমালায় বড় পরিবর্তন: নির্মাতারা পাবেন বাড়তি সুবিধা

এফএনএস বিনোদন : | প্রকাশ: ৮ মার্চ, ২০২৫, ০৭:৫৭ পিএম : | আপডেট: ১৪ মার্চ, ২০২৫, ০৭:৪৯ পিএম
চলচ্চিত্র অনুদানের নীতিমালায় বড় পরিবর্তন: নির্মাতারা পাবেন বাড়তি সুবিধা

চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদানের নীতিমালায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। নতুন নীতিমালায় নির্মাতাদের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণের সময়সীমা দ্বিগুণ করা হয়েছে। এ ছাড়া লেখক ও চিত্রনাট্যকারদের সম্মানী বৃদ্ধি, অর্থ প্রদানের পদ্ধতিতে পরিবর্তন এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। গত ৬ মার্চ ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান প্রদান নীতিমালা, ২০২৫’ এবং ‘স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান প্রদান নীতিমালা, ২০২৫’ শীর্ষক প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রণালয়। 

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের সময়সীমা ৯ মাস থেকে বেড়ে ১৮ মাস করা হয়েছে। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ মাস এবং প্রামাণ্যচিত্রের জন্য ২৪ মাস। তবে বিশেষ প্রয়োজনে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য সর্বোচ্চ ছয় মাস এবং স্বল্পদৈর্ঘ্যের জন্য তিন মাস করে সময় বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। নির্মাতারা দীর্ঘদিন ধরে সময়সীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের মতে, পূর্বের সময়সীমায় চলচ্চিত্র নির্মাণ ও মুক্তি দেওয়া কঠিন ছিল। নতুন এই সিদ্ধান্তে নির্মাতারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

নতুন নীতিমালায় লেখক ও চিত্রনাট্যকারদের সম্মানী উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে। গল্প লেখককে ২ লাখ টাকা এবং চিত্রনাট্যকারকে ৩ লাখ টাকা উৎসাহ পুরস্কার দেওয়া হবে। আগে উভয়কেই ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হতো। এই পরিবর্তন চলচ্চিত্রের গল্প ও চিত্রনাট্যের মানোন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রতি অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকে অনুদান দেওয়া হবে, যা আগে ছিল ১০টি। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে অনুদানের সংখ্যা ১০টি থেকে বেড়ে ২০টি করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় প্রামাণ্যচিত্র, শিশুতোষ চলচ্চিত্র, রাজনৈতিক ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক ইতিহাস বিষয়ক চলচ্চিত্রকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নির্মাতাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে প্রস্তাবকারী পরিচালককে কমপক্ষে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ বা সংশ্লিষ্ট কাজে অংশগ্রহণের শর্ত যুক্ত করা হয়েছে।

অর্থ প্রদানের পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রথম কিস্তি হিসেবে অনুদানের ২০ শতাংশ দেওয়া হবে। এই অর্থ প্রাপ্তির দুই মাসের মধ্যে নির্মাতাদের শুটিং শিডিউল, প্রোডাকশন প্ল্যান, লোকেশন ব্যবহারের অনুমতি এবং শিল্পীদের সঙ্গে চুক্তিপত্র জমা দিতে হবে। চলচ্চিত্র বাছাই ও তত্ত্বাবধান কমিটি সন্তুষ্ট হলে অনুদানের ৫০ শতাংশ অর্থ দেওয়া হবে। এরপর চিত্রায়িত অংশের ৫০ শতাংশ রাফকাট এবং শিল্পীদের সম্মানী প্রাপ্তির প্রমাণপত্র দেখানোর পর আরও ২০ শতাংশ অর্থ মিলবে। চলচ্চিত্র মুক্তির পর বাকি ১০ শতাংশ অর্থ প্রদান করা হবে।

অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলো কমপক্ষে দেশের পাঁচটি প্রেক্ষাগৃহে বা ১০টি জেলা তথ্য কমপ্লেক্স, শিল্পকলা একাডেমি, পাবলিক অডিটরিয়াম বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে প্রদর্শন করতে হবে। এ ছাড়া অনুদানের চলচ্চিত্র হলে মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। সরকার চলচ্চিত্র হলে মুক্তির জন্য কর রেয়াতসহ বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করবে।

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চলচ্চিত্র নির্মাণ শেষ না করলে বা চুক্তি ভঙ্গ করলে নির্মাতাকে অনুদানের টাকা সুদসহ ফেরত দিতে হবে। এ ছাড়া নির্মীয়মাণ বা মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য জমা দেওয়া যাবে না। চলচ্চিত্র মৌলিক না হলে বা চুক্তি ভঙ্গ করলেও একই শাস্তি প্রযোজ্য হবে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য চলচ্চিত্র অনুদানের আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। আগ্রহীদের চলচ্চিত্রের গল্প, চিত্রনাট্য, অভিনয়শিল্পীদের নামসহ পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ আগামী ৭ এপ্রিল বিকেল ৪টার মধ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে।

এই নতুন নীতিমালায় চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়ন ও নির্মাতাদের সুবিধা নিশ্চিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নির্মাতারা এই পরিবর্তনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এবং সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW