মানবজীবনের আয়ুকাল বৃদ্ধি করা সবসময় বিজ্ঞানীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিলো এবং এটি বিজ্ঞানীদের অন্যতম আকর্ষণীয় গবেষণার বিষয়ও। সম্প্রতি কিছু বিজ্ঞানী বিভিন্ন ওষুধের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন, যাতে বার্ধক্যজনিত সমস্যা কমানো যায় এবং সুস্থভাবে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা সম্ভব হয়। মাইফেপ্রিস্টোন নামক একটি ওষুধ সাধারণত গর্ভপাত ঘটানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, এটি কোষের অভ্যন্তরে মাইটোকন্ড্রিয়ার স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে, যা দীর্ঘায়ুর সঙ্গে সম্পর্কিত। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার (টঝঈ) ডরনসাইফ কলেজের বিজ্ঞানীরা এই ওষুধের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখতে পান যে, এটি মাইটোফাজি (গরঃড়ঢ়যধমু) প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে। মানবদেহের প্রতিটি কোষে মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে, যা কোষের জন্য শক্তি উৎপন্ন করে। তবে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অনেক মাইটোকন্ড্রিয়া নষ্ট হয়ে যায় এবং কোষের অভ্যন্তরে বিষাক্ত আবর্জনা জমতে থাকে। মাইটোফাজি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে নষ্ট মাইটোকন্ড্রিয়াগুলো ধ্বংস হয় এবং নতুন মাইটোকন্ড্রিয়ার বিকাশ ঘটে। বিজ্ঞানীরা পূর্বে দেখেছেন যে, বার্ধক্যের সঙ্গে মাইটোফাজির কার্যকারিতা কমে যায়, ফলে কোষের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। এই প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে সক্রিয় থাকলে কোষ সুস্থ থাকে এবং বার্ধক্যজনিত রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, রাপামাইসিন নামক আরেকটি ওষুধ মাইটোফাজি বাড়িয়ে আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করতে পারে। এবার গবেষকরা মাইফেপ্রিস্টোনের ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রভাব লক্ষ্য করেছেন। গবেষকরা ফলপ্রসূভাবে পরীক্ষাগারে ফল মাছি (ভৎঁরঃ ভষু) ব্যবহার করে এই গবেষণা চালান। ফল মাছির উপর গবেষণা করার কারণ হলো, এদের জিনগত বৈশিষ্ট্য মানুষের সঙ্গে অনেকাংশে মিল রয়েছে এবং এদের জীবনচক্র ছোট হওয়ায় দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, মাইফেপ্রিস্টোন প্রয়োগের ফলে এই মাছিগুলোর আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও, গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাইফেপ্রিস্টোন এবং রাপামাইসিন একসঙ্গে প্রয়োগ করলে কোনো অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া যায় না, বরং আয়ুষ্কাল কিছুটা কমে যায়। এর অর্থ হলো, এই দুটি ওষুধ একই প্রক্রিয়ায় কাজ করে এবং একসঙ্গে ব্যবহার করলে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া নাও যেতে পারে। যেহেতু মাইফেপ্রিস্টোন ইতিমধ্যেই চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনুমোদিত, তাই একে বার্ধক্য প্রতিরোধী ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে মানবদেহে এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হলে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে পারবেন যে, এটি মানুষের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে কি না। যদি এটি সফল হয়, তবে এটি একটি সহজলভ্য ও নিরাপদ পদ্ধতি হতে পারে, যা বার্ধক্যজনিত কোষীয় অবক্ষয় প্রতিরোধে সহায়ক হবে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, মাইটোকন্ড্রিয়ার স্বাস্থ্য রক্ষা করাই হতে পারে দীর্ঘ জীবনের চাবিকাঠি। গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও, মাইফেপ্রিস্টোনের এই নতুন সম্ভাবনা বার্ধক্য প্রতিরোধী চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। ভবিষ্যতে আরও বিস্তারিত গবেষণা এবং মানবদেহে ক্লিনিকাল ট্রায়াল পরিচালনার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করতে পারবেন, এটি কতটা কার্যকর।