পদ্মা ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতি: নাফিজ সরাফাতসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ০৮:১৭ পিএম : | আপডেট: ২১ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:২৭ পিএম
পদ্মা ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতি: নাফিজ সরাফাতসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতসহ চারজনের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে। ব্যাংকটির গুলশান করপোরেট শাখা থেকে ২০২২ সালে ৫ কোটি টাকার "টাইম লোন" নিয়েছিলেন আব্দুল মোনেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম মঈনউদ্দীন মোনেম, তার স্ত্রী মিসেস ফারহানা মোনেম এবং পদ্মা ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সাব্বির মোহাম্মদ সায়েম। এই ঋণের শর্ত ভঙ্গ করে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঋণের অর্থ অন্য ঋণের দায় পরিশোধে ব্যবহার করেছেন, যা পরবর্তীতে আত্মসাতের চেষ্টা হিসেবে দেখা যায়।

মামলার অনুসন্ধানী কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, ঋণের শর্ত অনুযায়ী, এই অর্থ ব্যবসার মূলধন হিসেবে ব্যবহার হওয়ার কথা ছিল, তবে বাস্তবে দেখা যায়, এটি অন্য ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করা হয়েছে। দুদক কর্মকর্তা মুহাম্মদ রাকিব উদ্দিন মিনহাজ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা এভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করেছেন।

২০২২ সালে পদ্মা ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে "টাইম লোন" হিসেবে ৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদিত হয়। কিন্তু ঋণের শর্ত ভঙ্গ করে, তারা এই টাকা ব্যবসার মূলধন হিসেবে ব্যবহার না করে, এটি অন্য ঋণের দায় পরিশোধের জন্য খরচ করেন। এমনকি ঋণের পরিশোধের সময়সীমা চলে এলেও, তা যথাসময়ে পরিশোধ করা হয়নি এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি। দুদকের অনুসন্ধানের পর, এই ঋণের টাকা ২০২৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্দেহজনক নগদ লেনদেনের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়।

নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে শুধু ঋণ জালিয়াতি নয়, ব্যাংক দখল, ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অন্যান্য আর্থিক অনিয়মের অনেক অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিভিন্ন সময় ব্যাংক থেকে টাকা আত্মসাৎ করে কানাডায় বাড়ি নির্মাণ করেছেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালে পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর, নাফিজ সরাফাত বিভিন্ন কৌশলে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তবে, তিনি ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি ব্যক্তিগত ও স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগ করেন।

দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, এই অভিযোগে নাফিজ সরাফাতসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯, ১০৯, ৪২০ এবং ৫১১ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারাতেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

তদন্তকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই মামলার তদন্ত করছে। নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে একাধিক আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে, যদিও তিনি এখন দেশের বাইরে রয়েছেন।

এ ঘটনার পর, গত কয়েক বছরে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনুসন্ধান শুরু হলেও, তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে, বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থাগুলোর অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে