বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বাণিজ্য উত্তেজনা এবং নিরাপদ বিনিয়োগের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধির ফলে স্বর্ণের বাজারে রীতিমতো টানাপোড়েন চলছে। সম্প্রতি এই মূল্যবান ধাতুটির দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করেছে, যার প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারেও।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান শুল্ক আরোপ পাল্টাপাল্টিতে বিশ্ববাজারে সোনার দামে একের পর এক উত্থান-পতনের ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘাতের ফলে মার্চের শেষ দিকে প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩১৫০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। এরপর বড় পতনের পর আবারও দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়, যখন চীন পাল্টা শুল্ক আরোপ করে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার জবাবে শুল্কহার ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৬ এপ্রিল বিশ্ববাজারে সোনার দাম নতুন রেকর্ড গড়ে। স্পট মার্কেটে দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৩২৭০.১২ ডলার, যা দিনের শুরুতে একসময় ৩২৭৫.২০ ডলারেও পৌঁছেছিল। ফিউচার মার্কেটেও দেখা যায় একই প্রবণতা—প্রতি আউন্সে লেনদেন হয় ৩২৮৬.৩০ ডলারে।
বিশ্লেষকদের মতে, ডলারের অবমূল্যায়ন, ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগের কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন। সিঙ্গাপুরভিত্তিক গোল্ডসিলভার সেন্ট্রালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রায়ান ল্যান বলেন, "যতক্ষণ অনিশ্চয়তা থাকবে, স্বর্ণের বাজার ততক্ষণ শক্তিশালী থাকবে।"
আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারেও। ১৩ এপ্রিল দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক ভরি (২২ ক্যারেট) সোনার দাম পৌঁছে যায় ১,৬৩,২১৪ টাকায়। এর ঠিক পরদিনই (১৪ এপ্রিল) কিছুটা দাম হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ১,৬২,১৭৬ টাকা। তবে বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই কমা সাময়িক। কারণ বিশ্ববাজারে ইতোমধ্যে প্রতি আউন্স সোনার দাম আরও ১৫০ ডলার বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের বাজারে বিভিন্ন ক্যারেটের সোনার দাম নিম্নরূপ:
• ২২ ক্যারেট: ১,৬২,১৭৬ টাকা
• ২১ ক্যারেট: ১,৫৪,৮০৫ টাকা
• ১৮ ক্যারেট: ১,৩২,৬৯০ টাকা
• সনাতন পদ্ধতির: ১,০৯,৫৩৭ টাকা
বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকলে খুব শিগগিরই দেশের বাজারেও সোনার নতুন দামের রেকর্ড গঠিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।