দেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের দিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে প্রথমবারের মতো জাতীয় বাজেট ঘোষণা হতে যাচ্ছে আগামী ২ জুন। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই বাজেট ঘোষণা করবেন টেলিভিশনের পর্দায়, কারণ বর্তমানে দেশে জাতীয় সংসদ কার্যকর নেই।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা—যা চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মূল বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। এটি স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো পূর্ববর্তী বাজেটের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট বাজেট হতে যাচ্ছে। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এবং বাজেট ঘাটতির লাগাম টানতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল (১৫ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত আর্থিক, মুদ্রানীতি ও বিনিময় হার বিষয়ক সমন্বয় কাউন্সিল এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির যৌথ বৈঠকে বাজেট ঘোষণার এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সাধারণত প্রতি বছর জুন মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার বাজেট উপস্থাপনের রেওয়াজ থাকলেও এবার ঈদুল আজহার ছুটির কারণে সেই ধারায় পরিবর্তন আসছে। বাজেট ঘোষণা করা হবে সোমবার, ২ জুন।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাশি সাধারণ জনগণের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫.৫ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আগামী অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পেতে যাচ্ছে, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা বেশি।
প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে।
সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বিস্তৃত করা হবে এবং নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য ভাতার পরিমাণ ও উপকারভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। মূল্যস্ফীতির প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের জীবনযাত্রা সহজ করতে এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে।
বাজেট ঘোষণার পরদিন, অর্থ উপদেষ্টা বাজেট-পরবর্তী আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন। সেখানে বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পাশাপাশি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরও দেবেন তিনি।