বিনা টেন্ডারে কোটি কোটি টাকা: স্বচ্ছতা কোথায়?

এফএনএস : | প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:৪৪ পিএম
বিনা টেন্ডারে কোটি কোটি টাকা: স্বচ্ছতা কোথায়?

নাটোর জেলার সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প ঘিরে রেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)-এর কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ ও গভীর উদ্বেগজনক। ১৭৫ কোটি টাকার প্রকল্পে ৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে তা ব্যয় করা হয়েছে শুধুমাত্র কোটেশনের মাধ্যমেÑযা সরকারি ক্রয়বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কাগজে-কলমে ‘স্বচ্ছতা’ রক্ষা করা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সীমার বেশি ব্যয়ের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান বাধ্যতামূলক। অথচ, ‘ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশন’ নামের একটি পছন্দের ঠিকাদারকে ১৭টি কাজ দেওয়া হয়েছে দরপত্র ছাড়াই। বিষয়টি কেবল পক্ষপাতিত্বই নয়, বরং দুর্নীতিরও ইঙ্গিত দেয়। বিশেষত, প্রতিটি ১০ লাখ টাকার করে একাধিক কোটেশনে প্রকল্প বিভাজন করে একই ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার কৌশল আদতে কোটেশনের সীমা পার করে প্রকৃত টেন্ডার প্রক্রিয়াকে এড়িয়ে যাওয়ার এক ধরনের কৌশলী কারচুপি। এর চেয়েও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, বড়াইগ্রাম উপজেলার নতুনবাজার এলাকায় হাইড্রোলিক ড্যামের কাজ শেষ না হলেও কাগজপত্রে তা সমাপ্ত দেখিয়ে ঠিকাদারদের নামে পেছনের তারিখে চেক ইস্যু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রকল্প মেয়াদ শেষ দেখিয়ে অর্থ ছাড়ের অপচেষ্টা করা হয়েছেÑযা সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনার নীতি ও নৈতিকতার ঘোর লঙ্ঘন। প্রকল্প পরিচালক বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ‘সব হয়েছে’ বললেও বাস্তবতা তা বলে না। চেক ইস্যুর তারিখ, প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি এবং বরাদ্দের ব্যবস্থাপনায় যে গরমিল রয়েছে তা প্রকল্পের সার্বিক গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এ ধরনের অনিয়ম কেবল জনগণের করের টাকার অপব্যবহারই নয়, বরং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আস্থাহানির কারণ। এটি দেশের উন্নয়ন যাত্রাকে ধীর করে দেয়, ব্যাহত করে নীতিগত শৃঙ্খলা। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উচিত, অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। প্রয়োজনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কর্তৃক এ ঘটনার নিরীক্ষা হওয়া উচিত। উন্নয়ন অবশ্যই প্রয়োজন, তবে তা কোনোভাবেই স্বজনপ্রীতি, গোপন চুক্তি বা নিয়ম ভাঙার ভিত্তিতে নয়। জনগণ স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং ন্যায্য ব্যবস্থাপনার মধ্যেই উন্নয়ন দেখতে চায়।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW