মৌলভীবাজার বিসিক শিল্পনগরীÑযার নাম শুনলে শিল্পায়নের আশ্বাস ও অর্থনৈতিক গতিশীলতার প্রত্যাশা জাগে, বাস্তবে সেখানে রয়েছে দীর্ঘ ২৭ বছরের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনাহীনতার নির্মম চিত্র। একটি পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে শিল্পনগরী হয়ে উঠেছে এক অচল, দূষিত এবং জনদুর্ভোগের প্রতীক। ১৯৯৮ সালে ২ কোটি ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে যাত্রা শুরু করলেও আজ অবধি গড়ে ওঠেনি একটি কার্যকর পানি ও বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা। ভাটির দিকে পার্শ্ববর্তী কাঞ্জাইর হাওরে বিষাক্ত পানি ফেলে শুধু কৃষকের জীবন-জীবিকা নয়, পুরো এলাকার পরিবেশকেও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। হাওরের জমি অনাবাদি, দূষিত পানিতে আক্রান্ত কৃষকরাÑএই সংকট কোনো আজকের নয়, দীর্ঘ দিনের। অথচ কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে দৃশ্যমান কোনো সমাধান দিতে পারেনি। ব্যর্থতা এখানেই শেষ নয়। সমস্যার সমাধানে এখন যে ‘উজানের দিকে’ পানি নিষ্কাশনের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, তা আরও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। ভাটির পরিবর্তে উজানের দিকে বর্জ্য সরিয়ে নেওয়ার অর্থ হচ্ছেÑজলাবদ্ধতা, দুর্গন্ধ এবং আশপাশের প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে বাধা। পুুলিশ লাইন, যুব উন্নয়ন কেন্দ্র, কারাগার বা মাদ্রাসাÑএগুলো কেবল প্রতিষ্ঠান নয়, জনসাধারণের সেবাকেন্দ্র। সেখানে দূষণ ছড়িয়ে পড়লে তার প্রভাব শুধু শিল্প এলাকা নয়, সমগ্র শহরবাসীর ওপর পড়বে। রাস্তার পাশে ময়লার স্তূপ, ভরাট হয়ে যাওয়া ড্রেন, বিষাক্ত বর্জ্যরে পঁচা গন্ধ আর বনজঙ্গলে ছেয়ে থাকা প্লটÑএসব কি কোনো সরকারি শিল্পাঞ্চলের পরিচয় বহন করে? ব্যবসায়ীদের ভাষায়, ‘শিল্পের নামে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, তার দায় কার?’ এই প্রশ্নের জবাব বিসিক কর্তৃপক্ষের কাছে চাইতেই হবে। পরিকল্পনার অভাব, দায়িত্বশীলতার ঘাটতি এবং স্থানীয়দের মতামতকে উপেক্ষা করার যে প্রবণতা বিসিক প্রশাসনে দেখা যায়, তা থেকে অবিলম্বে বেরিয়ে আসা জরুরি। আমরা মনে করি, মৌলভীবাজার বিসিক শিল্পনগরী নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। একদিকে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি ও পরিবেশবান্ধব ড্রেনেজ ব্যবস্থার বাস্তবায়ন, অন্যদিকে জরুরি ভিত্তিতে স্থানীয়দের সঙ্গে সংলাপ করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান খুঁজে বের করা। শিল্পায়ন হোক জনবান্ধব, পরিকল্পিত এবং পরিবেশসম্মতÑএটাই এখন সময়ের দাবি।