শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিÑঅর্থনীতির গতি রুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা

সম্পাদকীয় : | প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম
শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিÑঅর্থনীতির গতি রুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা

বাংলাদেশের শিল্পখাত আজ বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে। একদিকে বৈশ্বিক মন্দা, অন্যদিকে দেশের ডলার সংকট, মূল্যস্ফীতি এবং চাহিদার ঘাটতিÑএর মাঝেই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) ঘোষিত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি যেন ঘি ঢালার কাজ করল। ৩৩ শতাংশ হারে এই মূল্যবৃদ্ধি ইতোমধ্যেই শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিল্প বয়লারে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ৩০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ টাকা এবং ক্যাপটিভ পাওয়ারের জন্য ৩১.৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৪২ টাকা। এই বৃদ্ধির পরিণতিতে দেশের উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। বিশেষ করে যারা গ্যাসের উপর নির্ভরশীল, যেমন পোশাক, সিরামিক, ওষুধ এবং প্যাকেজিং শিল্প, তারা তীব্র প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। এখানে বিশেষভাবে উদ্বেগের বিষয় হলো, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা হিসেবে পেট্রোবাংলার যে ১৬ হাজার কোটি টাকার ঘাটতির কথা বলা হয়েছে, তা আসলে কাঠামোগত দুর্বলতা ও ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার পরিচায়ক। উৎপাদনশীল খাতে তার দায় চাপিয়ে দেওয়া ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করবে। ব্যবসায়ী নেতারা একে বৈষম্যমূলক এবং অগ্রহণযোগ্য বলে আখ্যা দিয়েছেন। একই খাতে দুই ধরনের দাম নির্ধারণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গ্যাস একটি প্রাথমিক জ্বালানি, যা শিল্প উন্নয়নের ভিত্তিপ্রস্তর। এই খাতে হঠাৎ করে বড় অঙ্কে মূল্যবৃদ্ধি কেবল বিদ্যুৎ খাতে নয়, পুরো সরবরাহ শৃঙ্খলেই সংকট তৈরি করতে পারে। এর ফলে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, রপ্তানিযোগ্য পণ্যের প্রতিযোগিতা কমবে এবং সর্বোপরি ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়বে। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি তাদের জন্য একপ্রকার ‘ধ্বংসাত্মক অভিঘাত’ হয়ে এসেছে। বিইআরসি চেয়ারম্যানের বক্তব্যে, নতুন শিল্পে যারা বিনিয়োগ করবেন, তারা বিকল্প জ্বালানি ভাবতে পারেনÑএই মন্তব্য অনভিপ্রেত। বাংলাদেশ এখনও নবায়নযোগ্য বা বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারে পর্যাপ্ত সক্ষম নয়। এই বাস্তবতায় গ্যাসের দাম বাড়ানো মানে কার্যত শিল্পকে সংকোচনের দিকে ঠেলে দেওয়া। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে উৎপাদনমুখী খাতকে টার্গেট করা কোনোভাবেই টেকসই অর্থনীতির পথ নয়। বরং জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন নিশ্চিত করাই হওয়া উচিত মূল লক্ষ্য। একইসঙ্গে প্রণোদনা ভিত্তিক পুনঃমূল্যায়ন নীতিমালা প্রণয়ন করে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোকে সময় দেওয়া উচিত অভিযোজনের জন্য। বাংলাদেশ যদি শিল্পোন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যেতে চায়, তবে এ ধরনের একতরফা মূল্যবৃদ্ধি পরিহার করে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ও যৌক্তিকতা নির্ভর নীতিনির্ধারণ করাই এখন সময়ের দাবি।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW