বাংলাদেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। জনসংখ্যার এই পরিবর্তন কেবল একটি সামাজিক রূপান্তরের ইঙ্গিতই দেয় না, বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে গুরুতর স্বাস্থ্য সংকটÑযার একটি বড় উদাহরণ পারকিনসন্স রোগ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস’। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছেÑএই দিবস কি কেবল একদিনের আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি এটি হয়ে উঠবে সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপের উদ্দীপনা? পারকিনসন্স রোগ একটি স্নায়বিক সমস্যা, যা ধীরে ধীরে রোগীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসহায় করে তোলে। প্রথমে হাত-পায়ের কাঁপুনি দিয়ে শুরু হলেও ধীরে ধীরে রোগী হাঁটার অক্ষমতা, স্মৃতি হারানো, স্বর ও মুখাবয়বে জড়তা, বিষণ্নতা ও ঘুমের ব্যাঘাতসহ নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হন। অথচ এতো গুরুতর একটি রোগ সম্পর্কে দেশের বেশিরভাগ মানুষই জানেন না। কারণ এটিকে সাধারণ বার্ধক্যজনিত সমস্যা হিসেবে উপেক্ষা করা হয়। এমনকি চিকিৎসা ব্যবস্থাতেও রোগটি নিয়ে কোনো জাতীয় পরিসংখ্যান বা গবেষণার অস্তিত্ব নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, ষাটোর্ধ্ব মানুষের প্রায় ১০ শতাংশ এই রোগে আক্রান্ত, এবং ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। কিন্তু দেশে প্রবীণদের যত্ন ও সেবার যে অবকাঠামো রয়েছে, তা এই রোগ মোকাবিলায় একেবারেই অপ্রতুল। পারকিনসন্স চিকিৎসায় যে অগ্রগতি প্রয়োজন, সেটি আজও আমাদের স্বাস্থ্যের মূল স্রোতে আসেনি। অনেক রোগী চিকিৎসা না নিয়ে দ্রুত শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন, শুধু মাত্র সচেতনতা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে। এই প্রেক্ষাপটে ‘বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস’-এর এবারের প্রতিপাদ্যÑ“বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের ক্ষমতায়ন, আবিষ্কার এবং যত্ন উদ্ভাবন ত্বরান্বিত করুন”-এখানে যথার্থ বলেই প্রতিভাত হয়। বাংলাদেশেও এখন সময় এসেছে, যখন শুধু দিবস পালনে সীমাবদ্ধ না থেকে, এই রোগ নিয়ে গবেষণা, পরিসংখ্যান সংরক্ষণ, এবং রোগীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি যত্ন পরিকল্পনার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজন জাতীয় পর্যায়ের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও বরাদ্দ, বিশেষ করে প্রবীণদের জন্য সমন্বিত সেবাকেন্দ্র এবং প্রশিক্ষিত চিকিৎসাকর্মী নিশ্চিত করা। বার্ধক্য কোনো অভিশাপ নয়, এটি মানবজীবনের স্বাভাবিক ধারা। কিন্তু এই ধারা যেন সম্মানের সঙ্গে এবং যত্নের আবহে পূর্ণ হয়, সেই দায়িত্ব রাষ্ট্র, সমাজ এবং পরিবারের। পারকিনসন্স রোগ কেবল একজন রোগীর নয়, বরং একটি পরিবারের, একটি সমাজের দায় হয়ে ওঠে। তাই এখনই সময়, এই রোগকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা এবং সচেতনতা, চিকিৎসা ও সহানুভূতির পথ তৈরি করা।