বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি কমে আসায় চলতি বছরে আরও ৩০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের কষাঘাতে পড়তে পারে—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। বুধবার (২৩ এপ্রিল) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। বিশ্বব্যাংক জানায়, দেশের শ্রমবাজারের দুর্বল অবস্থা, প্রকৃত আয় হ্রাস এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে শ্লথগতি এই নতুন দারিদ্র্য বৃদ্ধির মূল কারণ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরেও শ্রমবাজারে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর প্রকৃত আয় কমে যাবে, বিশেষ করে যারা ইতিমধ্যেই দারিদ্র্যসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। এতে আয় বৈষম্য আরও বাড়বে, যা সমাজে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, যাদের দৈনিক আয় ২ দশমিক ১৫ ডলারের নিচে, তারা ‘হতদরিদ্র’ হিসেবে চিহ্নিত হন। বাংলাদেশে এই শ্রেণির মানুষের হার ২০২২ সালে ছিল ৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক আশঙ্কা করছে, ২০২৫ সালে এই হার বাড়তে বাড়তে ৯ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
একইভাবে, অতি দারিদ্র্য হার ২০২২ সালের ৭ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৫ সালে একই পরিমাণে, অর্থাৎ ৯ দশমিক ৩ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। আর জাতীয় দারিদ্র্যের হার ২০২৪ সালের সাড়ে ২০ শতাংশ থেকে ২২ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
একই দিনে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের আরেকটি প্রতিবেদন ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট: ট্যাক্সিং টাইমস’-এ উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। জানুয়ারিতে সংস্থাটি যেখানে ৪ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করেছিল, সেখানে নতুন পূর্বাভাসে তা আরও কমিয়ে ধরা হয়েছে।
তবে আগামী অর্থবছরে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনার কথা বলছে সংস্থাটি। ২০২৫ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে।
বিশ্বব্যাংক মনে করে, পণ্য ও সেবার উপর উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক বিনিয়োগে স্থবিরতা, রপ্তানি আয় হ্রাস, এবং রিজার্ভ সংকট বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে দুর্বল করে তুলেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শ্রমবাজারে স্থবিরতা, যা সমাজের সবচেয়ে প্রান্তিক ও ভঙ্গুর জনগোষ্ঠীর জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলছে।