দুনিয়ার মজদুর, এক হও-এক হও। শ্রমিকের অধিকার, দিতে হবে-দিতে হবে। আমাদের দাবী, মানতে হবে-মানতে হবে, ইত্যাদি স্লোগানে সারাদেশে শ্রমিকদের মিছিলে যখন রাজপথ উত্তাল তখন জীবণ ও জীবিকার তাগিদে মাঠে ধান কাটার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার কৃষি মজুররা। মহান মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসটিই তাদের অজানা। তিন বেলা পেট পুরে দু-মুঠো ভাতের আশায় দিনভর হাড়ভাঙ্গা কায়িক পরিশ্রমে ব্যস্ত থাকায় কোন দিবসের মানে যেন খুঁজে পায়না হতদরিদ্র এই কৃষি মজুররা। দেশের মোট শ্রম শক্তির একটা বড় অংশই কৃষি মজুর হলেও মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের সাথে কোন সম্পর্ক নেই এ সকল প্রকৃত মজুরদের।
পহেলা মে বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল পত্নীতলা শাখা, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন, পত্নীতলা শাখা, ব্যাটারি চালিত ভ্যান ও রিকসা শ্রমিক ইউনিয়ন, নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন শ্রমিক ও পেশাজিবী সংগঠন উপজেলা পৌর সদর নজিপুরে পৃথক পৃথক ভাবে র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করেন। এ সময় শ্রমিকরা সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন উপজেলা পর্যায়ে মিছিল ও সমাবেশ আয়োজন করলেও কৃষি শ্রমিকদের কোন কর্মসূচী চোখে পড়েনি।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে বিক্ষিপ্তভাবে কৃষি মজুররা আগাম জাতের বোরো ধান কাটার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নজিপুর পৌর সদরের বাদপুঁইয়া মাঠে ধান কাটার সময় কথা হয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দুজন নারী শ্রমিক শেফালি পাহান ও মনি পাহানের সাথে। আলাপচারিতায় তাঁরা জানান, দৈনিক ৪শত টাকার মজুরীতে তাঁরা ধান কাটছেন। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, এ বিষয়ে তাদের কোন ধারণা নেই। দৈনিক দিনমজুরী দিয়ে জীবণ চালাতে হয়। সারাদিন কাজ করে যা পাবেন তা দিয়ে বাজার করে নিয়ে গিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খাবেন।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের একটি বিশেষ তাৎপর্য থাকলেও প্রায়োগিক দুর্বলতার কারণে এর উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে। বছরে একদিন রালি আর সভা করেই যেন দায় সারছে স্থানীয় শ্রমিক সংগঠনগুলো। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যাতে প্রকৃত শ্রমিকরা এই দিবসের তাৎপর্য উপলদ্ধি করে তাদের অধিকার আদায়ের পথ সুগম করতে পারে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন এলাকার সচেতন মহল।