জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিচ্যুত ৯৮৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘ বছর ধরে ন্যায়বিচারের আশায় আদালতের দ্বারস্থ ছিলেন। প্রায় দেড় যুগ পর অবশেষে সেই প্রত্যাশার বাস্তবায়ন ঘটল। মঙ্গলবার (২৭ মে) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই ৯৮৮ জনকে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
২০০৩ ও ২০০৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত হন ৯৮৮ কর্মকর্তা ও কর্মচারী। কিন্তু ২০১১ সালে একটি রিভিউ মামলার রায়ে আদালত তাদের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট তাদের চাকরিচ্যুত করে। পরবর্তীতে জানা যায়, কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের ভিত্তিতে এই রায় হয়েছিল। এরপর থেকেই চাকরি হারানো এই মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপন শুরু করেন—অনেকে মারা যান বিনা চিকিৎসায়, অনেকেই দুঃসহ কষ্টে দিন কাটান।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামেন। একই সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন তাদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে। ৯ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতাসীন সরকারের সময় প্রতিহিংসার শিকার হয়ে চাকরিচ্যুত হওয়া ৯৮৮ জনকে পুনর্বহালের জন্য রিভিউ পিটিশন করা হবে।
এই রিভিউ শুনানি শেষে আপিল বিভাগ মঙ্গলবার (২৭ মে) রায়ে বলেন, চাকরিচ্যুত ৯৮৮ জনের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে। এই রায় শুধু ব্যক্তিগত জীবনের পুনর্গঠন নয়, একটি প্রশাসনিক অন্যায়ের ঐতিহাসিক সংশোধন হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
এই নিয়োগ বাতিলের প্রেক্ষাপটে প্রথম রিট দায়ের হয় ২০০৪ সালের ৩১ আগস্ট, তখনকার এমপি অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার মাধ্যমে। ২০০৬ সালের ২২ আগস্ট হাইকোর্ট এই রিট খারিজ করে। কিন্তু পরবর্তীতে গাজীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আকম মোজাম্মেল হক ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর আরেকটি রিভিউ মামলা দায়ের করেন, যার ভিত্তিতেই ২০১১ সালে ওই ৯৮৮ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
এই রায়কে কেন্দ্র করে কর্মচারীদের মধ্যে স্বস্তির ছায়া নেমে এসেছে। আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও প্রশংসা করেছেন। অনেকে বলছেন, এ রায় শুধু চাকরি ফিরে পাওয়া নয়—এটি তাদের আত্মমর্যাদা ও ন্যায়ের প্রতীক।