ঝিকরগাছার ত্রাস কাশেম-রবি বাহিনী আবারও বেপরোয়া, জনমনে আতঙ্ক

এফএনএস (মহসিন মিলন; বেনাপোল, যশোর) : : | প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৫:৩৮ এএম : | আপডেট: ৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম
ঝিকরগাছার ত্রাস কাশেম-রবি বাহিনী আবারও বেপরোয়া, জনমনে আতঙ্ক

যশোরের ঝিকরগাছায় আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসী কাশেম শিকদার ও রবি শিকদার বাহিনী। ফলে নতুন করে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পুলিশ প্রশাসন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ ১৫ বছর আওয়ামী লীগের শাসন আমলে আলোচিত কাশেম শিকদার ও রবি শিকদার তাদের সশস্ত্র দলবল নিয়ে ঝিকরগাছার নাভারণসহ আশপাশের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল সাধারণ মানুষ। চিহ্নিত এই সন্ত্রাসীদের অত্যাচারের সর্বোচ্চ শিকার হয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। অনেককে তারা বছরের পর বছর বাড়িছাড়া করে রেখেছিল। কাশেম-রবি বাহিনীর প্রধান কাজ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, চুরি-ডাকাতি, জমি দখল, ভাড়ায় মাস্তানি, ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় এবং প্রবাসী পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা। শার্শা উপজেলার নাভারণ সাতক্ষীরা মোড়, ঝিকরগাছার নাভারণ পুরাতন বাজার, রঘুনাথপুর ডাঙ্গী ও বাগ গ্রামে এ বাহিনীর রয়েছে ব্যাপক তৎপরতা।

কাশেম-রবি বাহিনীর এসব অপকর্ম নিয়ে গত ৭ অক্টোবর স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর কাশেম-রবি কিছুদিন গা ঢাকা দিয়েছিলেন। বর্তমানে নাভারণ ইউনিয়ন বিএনপির সদ্য এক বহিষ্কৃত নেতার শেল্টারে এখন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কাশেম- রবি বাহিনী। ফলে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে।

সন্ধ্যার পর সন্ত্রাসীদের এলাকায় মহড়া দিতে দেখা যাচ্ছে। এদের বেশিরভাগই বিভিন্ন মামলার আসামি। পুলিশ বিষয়টি জানা সত্ত্বেও রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে। যা নিয়ে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

কুখ্যাত কাশেম-রবি বাহিনীর অন্যতম সদস্যরা হলেন, বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড তাদের আপন মামা রঘুনাথপুর ডাঙ্গী গ্রামের ডাকাত সর্দার খ্যাত আবুল কালাম, একই গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে আলাল উদ্দিন, একই গ্রামের আজিজুল হক মন্টুর ছেলে ডাকাত মফিজুল, নাভারণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চারাতলা গ্রামের মৃত হার“নর রশিদের ছেলে দুর্র্ধষ সন্ত্রাসী যুবলীগ নেতা আলমগীর হোসেন ও ডাঙ্গী গ্রামের কাশেম শিকদারের দুই ছেলে সন্ত্রাসী ইয়াছিন শিকদার ও ইমরান শিকদার। এরা সবাই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বলে জানা গেছে। চিহ্নিত এই সন্ত্রাসীদের ক্ষমতার প্রধান উৎস ছিলেন ঝিকরগাছার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম।

ভুক্তভোগী রেজাউল ইসলাম জানান, ২০০৮-২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত কাশেম- রবির কথার বাইরে কোনও কাজ হতো না নাভারণ ইউনিয়নে। তাদের কথামতো কাজ না করায় বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা হামলা-মামলা, চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ালে তাকে চরম মূল্য দিতে হতো। ভুক্তভোগী আরও জানান, কাশেম- রবির নেতৃত্বে তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী অর্থের বিনিময়ে তার ভিটেবাড়ির তিন শতক জায়গা আওয়ামী লীগ নেতা হায়দারকে দখল করে দেয়। ভুক্তভোগী রেজাউল ইসলাম নাভারণ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের রঘুনাথপুর বাগ গ্রামের বাসিন্দা। কাশেম- রবিসহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, কাশেম শিকদার ও রবি শিকদার সম্পর্কে আপন দুই ভাই। পিতার নাম হাকিম শিকদার। তাদের বাড়ি ঝিকরগাছা উপজেলার নাভারণ ইউনিয়নের রঘুনাথপুর ডাংগী গ্রামে। কাশেম নাভারণ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তার ছোট ভাই রবি শিকদার একই ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। এছাড়া কাশেমের ছোট ছেলে ইমরান শিকদার যশোর পলিটেকনিক কলেজের  ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ইমরানের বিরুদ্ধে পূর্বে হত্যা ও যশোরে পুলিশের ওপর হামলার মামলার আসামি ছিল।

ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবলুর রহমান খান জানান, কাশেম-রবিসহ তাদের বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে দ্রুতই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং ভুক্তভোগীরা অবশ্যই ন্যায় বিচার পাবেন।


0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে