১৪৬ কোটিরও বেশি মানুষের দেশ ভারত। বহুত্ববাদী সংস্কৃতি আর বৈচিত্র্যময় গল্পের ভাণ্ডার এখানে সিনেমা জগৎকে করে তুলেছে বিস্তৃত এবং বর্ণময়। প্রতি বছরই অসংখ্য চলচ্চিত্র মুক্তি পায়, তবে খুব কম ছবিই বক্স অফিসে ব্লকবাস্টারের তকমা ছিনিয়ে নিতে পারে। চলতি বছরও সেই ব্যতিক্রম হয়নি। ভারতীয় বিভিন্ন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির তৈরি পাঁচটি সিনেমা দারুণভাবে বক্স অফিস মাতিয়ে তুলেছে। আইএমডিবি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই ব্লকবাস্টার ছবিগুলোর নাম, যেগুলো যেমন আয় করেছে বিপুল অর্থ, তেমনি গল্প, অভিনয় এবং নির্মাণশৈলী দিয়ে দর্শককেও মুগ্ধ করেছে।
চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাওয়া ‘ছাবা’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন রাশমিকা মান্দানা ও ভিকি কৌশল। ছবির গল্প এগিয়েছে শিবাজির পুত্র ছত্রপতি সম্ভাজি মহারাজের জীবনের উপর ভিত্তি করে। সম্ভাজির চরিত্রে ছিলেন ভিকি কৌশল এবং মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অক্ষয় খান্না। বাজেট ছিল ১৫০ কোটি রুপি। প্রথম দিনেই বিশ্বব্যাপী আয় করে ৪৭.২৫ কোটি রুপি। পরে বিশ্বব্যাপী মোট আয় দাঁড়ায় ৮০১.৯০ কোটি রুপিতে। এর মধ্যে ভারতে নিট আয় ৫৯৯.৯৫ কোটি রুপি এবং বিদেশে আয় ৯১ কোটি রুপি। আইএমডিবির রেটিং অনুযায়ী ছবিটি ব্লকবাস্টার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
এর আগে ১৪ জানুয়ারি মুক্তি পায় তেলেগু ভাষার সিনেমা ‘সংক্রান্তিকি বাস্তুনাম’। পরিচালনা করেছেন অনীল রবিপুড়ি। এতে অভিনয় করেছেন ভেঙ্কটেশ, মীনাক্ষী চৌধুরী ও ঐশ্বরিয়া রাজেশ। প্রাক্তন এক পুলিশ সদস্যের গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিকে উদ্ধারের গল্প নিয়ে এগিয়েছে সিনেমাটি। বাজেট ছিল ৬৫ কোটি রুপি। প্রথম দিনেই বিশ্বব্যাপী আয় করে ৩৫ কোটি রুপি। বিশ্বব্যাপী মোট আয় দাঁড়িয়েছে ২৬৭.০৫ কোটি রুপি। আইএমডিবির রেটিং ৬.২ হলেও ছবিটি ব্লকবাস্টার আখ্যা পেয়েছে।
এক বছর বিরতির পর বলিউডে ‘সিতারে জমিন পার’ সিনেমার মাধ্যমে ফিরে আসেন আমির খান। সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০ জুন। এটি পরিচালনা করেছেন আর. এস. প্রসন্ন। ছবিটি ২০০৭ সালের ‘তারে জমিন পার’ সিনেমার সিক্যুয়েল। প্রথম দিনের আয় ছিল ২০ কোটি রুপি। বিশ্বব্যাপী আয়ে এখন পর্যন্ত ২৩৯.৫০ কোটি রুপি সংগ্রহ করেছে সিনেমাটি, যা এখনও বর্ধনশীল। ভারতের নিট আয় ১৫৫.২৫ কোটি রুপি এবং বিদেশে আয় ৫৪ কোটি রুপি। ছবিটির আইএমডিবি রেটিং ৭.২ এবং এটিকেও ব্লকবাস্টার হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইএমডিবি।
মালায়ালাম সিনেমার সুপারস্টার মোহনলাল অভিনীত ‘তুডারাম’ মুক্তি পায় ২৫ এপ্রিল। তরুণ মুর্তির পরিচালনায় তৈরি এই সিনেমায় মোহনলাল এক বিনয়ী ট্যাক্সি ড্রাইভারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যাকে ভাগ্য কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছে। সিনেমার বাজেট ছিল ৩০ কোটি রুপি। প্রথম দিনেই ১৭.১০ কোটি রুপি আয় করে। বিশ্বব্যাপী মোট আয় দাঁড়িয়েছে ২৩৬.৫০ কোটি রুপিতে। আইএমডিবির রেটিং ৭.৬ এবং এটি ব্লকবাস্টার স্বীকৃতি পেয়েছে।
অন্যদিকে, ২১ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাওয়া ‘ড্রাগন’ পরিচালনা করেছেন অশ্বথ মারিমুথু। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে আর্থিক জালিয়াতির জগতে প্রবেশ করা রাগবনের গল্পে তৈরি এই সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রদীপ এবং অনুপমা পরমেশ্বর। ছবির বাজেট ছিল ৩৫ কোটি রুপি। প্রথম দিনেই আয় করে ১২.৩৫ কোটি রুপি। বিশ্বব্যাপী মোট আয় দাঁড়িয়েছে ১৫১.৪৩ কোটি রুপিতে। আইএমডিবির রেটিং ৭.৯ এবং ছবিটিও ব্লকবাস্টারের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
এই পাঁচটি ছবিই প্রমাণ করছে, ভারতীয় সিনেমার শক্তি শুধু তারকা নির্ভরতায় নয়, বরং বৈচিত্র্যময় গল্প ও বাণিজ্যিক সাফল্যের মেলবন্ধনে নিহিত। নানা আঞ্চলিক ইন্ডাস্ট্রির মিলিত সাফল্য চলচ্চিত্রের ভারতকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করছে।