মাইলস্টোন কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে নিহত বেড়ে ২০, চিকিৎসাধীন ১৭১

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ২১ জুলাই, ২০২৫, ০৯:০৫ পিএম | প্রকাশ: ২১ জুলাই, ২০২৫, ০৫:১০ পিএম
মাইলস্টোন কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে নিহত বেড়ে ২০, চিকিৎসাধীন ১৭১

ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়িতে অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান। সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে উড্ডয়নের কিছু সময়ের মধ্যেই বিমানটি কলেজের ইংরেজি মাধ্যম ক্যাম্পাসের একটি ভবনে ধাক্কা খায়। এখন পর্যন্ত এই দুর্ঘটনায় অন্তত ২০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে; আহত হয়েছেন আরও ১৭১ জন। ভয়াবহ এই ঘটনায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকসহ অনেকেই হতাহত হয়েছেন। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান উপদেষ্টা এই ঘটনায় শোক জানিয়েছেন, ঘোষণা করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় শোক দিবস।

আইএসপিআর জানিয়েছে, সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে কুর্মিটোলার এ কে খন্দকার বিমান ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান। এটি উড্ডয়নের ১২ মিনিটের মাথায় যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয় এবং পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে জনবিরল স্থানে নামানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে এটি মাইলস্টোন কলেজের ইংরেজি মাধ্যম ভবনে বিধ্বস্ত হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়।

দুই তলা বিশিষ্ট ‘হায়দার আলী ভবন’-এ তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির ক্লাস চলছিল। ছুটি শেষে অনেকে ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। বিধ্বস্ত বিমানটি ভবনে আঘাত হানার সঙ্গে সঙ্গেই আগুন লেগে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ইতিমধ্যে ভবনের ভেতরে থাকা অনেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক দগ্ধ হন। ঘটনাস্থল থেকে আহতদের রিকশা, ঠেলাগাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্সে করে আশেপাশের হাসপাতালে পাঠানো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী, স্থানীয় বাসিন্দা ও কর্মচারীদের ভাষ্যে বোঝা যায়, ঘটনার ভয়াবহতা কতটা গভীর। কেউ কেউ একজনকে প্যারাসুট দিয়ে নামতে দেখেছেন, আবার কেউ ভেতরে ঢুকে কাউকে বের করতে না পেরে ফিরে এসেছেন। কেউ দেখেছেন ছোট ছোট শিশুদের পুড়ে অচেনা হয়ে যাওয়া দেহ। এক অভিভাবক বলছিলেন, “আর একটু পরেই ছুটি হলে ছেলে বাসায় চলে যেত। আর এখন ছেলে আইসিইউতে।”

দগ্ধদের মধ্যে বেশিরভাগকে প্রাথমিকভাবে নেওয়া হয় ঢাকা সিএমএইচ, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, লুবনা জেনারেল হাসপাতাল, ক্রিসেন্ট হাসপাতাল ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে। পরে অধিকাংশ দগ্ধকে পাঠানো হয় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। ডা. শাওন বিন রহমান জানিয়েছেন, সেখানে ১৭১ জনের চিকিৎসা চলছে; অধিকাংশই শিক্ষার্থী এবং তাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক জানান, ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা মরদেহের সংখ্যা ছিল ১৯। রাত আটটার দিকে আইএসপিআর জানিয়েছে, মোট নিহতের সংখ্যা ২০ জনে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামও রয়েছেন। মরদেহগুলো বিভিন্ন হাসপাতালে রাখা হয়েছে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে অধিকাংশ নিহতের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।

চীনের তৈরি এই মাল্টি-রোল ফাইটার বিমানটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট এবং শব্দের গতির ২.২ গুণ বেগে উড়তে পারে। এটি মিগ-২১ এর উন্নত সংস্করণ। বাংলাদেশ ২০১১ সালে চীন থেকে ১৬টি এফ-৭ বিজিআই সংগ্রহ করে। এই মডেলের উড়োজাহাজের উৎপাদন বন্ধ হয় ২০১৩ সালে। এর আগেও ২০১৮ ও ২০২১ সালে দুটি এফ-৭ বিমান দুর্ঘটনায় পড়ে, সেগুলোতেও বৈমানিক নিহত হন।

এই হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালিত হবে। সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে নিহতদের জন্য প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

মাইলস্টোনের দুর্ঘটনায় সন্তানের খোঁজে যারা এখনও উদ্বিগ্ন, তাদের জন্য বিভিন্ন জরুরি যোগাযোগ নম্বর দেওয়া হয়েছে। বার্ন ইনস্টিটিউট এবং মিলিটারি রেস্কিউ ব্রিগেডসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর হটলাইন চালু রয়েছে।

নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরি যোগাযোগের নম্বর মাইলস্টোনের যে অভিভাবকরা তাদের সন্তানের খোঁজক পাননি, তাদের জরুরি যোগাযোগের জন্য কয়েকটি ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে।
>> মিলিটারি রেস্কিউ ব্রিগেড 01769024202
>> সিএমএইচ বার্ন ইউনিট 0176901601
 >> সিএমএইচ ইমার্জেন্সি 01769013311
>> মাইলস্টোন স্কুলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা 01814774132‬
>> মাইলস্টোন স্কুলের উপাধ্যক্ষ 01771111766

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে এসব নম্বর দিয়ে বলা হয়েছে, জাতীয় জরুরি নম্বর ৯৯৯ পুলিশের জরুরি সেল থেকে বার্ন ইউনিটগুলোর সঙ্গে সংযোগ করিয়ে দেবে। বার্ন ইনস্টিটিউটে হটলাইন হতাহতের ঘটনায় তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধার জন্য আলাদা হটলাইন চালু করেছে বার্ন ইনস্টিটিউট। জরুরি প্রয়োজনে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের হটলাইন নম্বর হল-০১৯৪৯০৪৩৬৯৭। এই নম্বর ব্যবহার করে সেবা গ্রহণ করা যাবে বলে প্রধান উপদেষ্টার সদর দপ্তর জানিয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে