বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে চাঁদপুরের মেঘনা উপকূলীয় অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারে স্বাভাবিকের চাইতে পানির উচ্চতা বেড়েছে প্রায় তিন ফুট। এতে করে ওইসব অঞ্চলের সড়ক, পুকুর,হাট- বাজার,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি ঘরে পানি ঢ়ুকে পড়েছে। অনেক জায়গার কাঁচা রাস্তা ভেঙ্গে জোয়ারের পানি
প্রবেশ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জানানো হয়, জোয়ারের সময় মেঘনার পানি বিপৎসীমা ৪ সেন্টিমিটারের ওপরে পয়েন্ট ২১ সেন্টিমিটার প্রবাহিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মেঘনার পানির উচ্চতা বেড়েছে। এ সময় চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার নদী উপকূলীয় চলাঞ্চল প্লাবিত হয়। এছাড়াও শহর রক্ষা বাঁধের পুরান বাজার এলাকায় নদীর পানি সড়ক সমান অবস্থায় রয়েছে।
শহরের পুরান বাজার রনাগোয়াল এলাকার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম ও ভুলু জানান, শুক্রবার বাতাসের তীব্রতার সাথে নদীর পানি বৃদ্ধি পায় এবং নদী উত্তাল হয়ে অনবরত ঢেউ শহর রক্ষা বাঁধের উপর আছড়ে পড়ে। এসময় নদীর পাড়ের দোকান ও বাড়ি ঘরে পানি উঠে যায়। পানির কারণে দোকানের মালপত্র সরিয়ে নিয়েছি।
সদর উপজেরার হানারচর ইউনিয়নের হরিণা ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দা মনির শেখ জানান, ফেরিঘাট এলাকায় পানি রাস্তা সমান। আশপাশের নীচু সড়কে পানি উঠেছে। ফেরিঘাট মসজিদের সাথে নদী রক্ষা বাঁধ ছুঁই ছুই করছে।
পাশবর্তী চান্দ্রা ইউনিয়নের বাখরপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ গাজী জানান, সেচ প্রকল্পের বাইরে সব বাড়ি, রাস্তা ও পুকুরে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে। তার নিজের পুকুরে মাছ চাষ করা হয়েছে। ওই পুকুরের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জানা যায়, উপজেলার ঈশানবালাসহ আশেপাশের চর এলাকার অবস্থা ভয়াবহ। এখানকার লোকালয় প্লাবিত হয়েছে।
সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের গোপালনগর, বলিয়ারচর, বাস গাড়ি, বলাশিয়া,মাঝেরচর গাজীকান্দি ও খাস খান্দি গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িতে বর্ষা ও জলোচ্ছ্বাসের পানি উঠে যায়।এতে
.বিভিন্ন রাস্তায় পানি উঠে ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং গোয়াল নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়.,বলাশিয়া ডি কে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়. চিরার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো পানি বন্দী। এই রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন চর এলাকা মেঘনা ও পদ্মা নদী বেষ্টিত। এই দুই নদীর পানি জোয়ারে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
সদর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, সেচ প্রকল্পের বাইরের মাছ চাষীদের সাথে যোগাযোগ করেছি। তাদেরকে মাছ সংরক্ষণের জন্য সতর্ক করা হচ্ছে।
হাইমচর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আশরাফুল হক জানান, চলতি মাসের মিটিংয়ে মৎস্য চাষীদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে ২৪ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পাবে। এরপরেও উপজেলা মৎস্য বিভাগ থেকে জেলেদের সতর্ক করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
চাঁদপুর আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা শাহ্ মো. শোয়েব বলেন, নিম্নচাপের কারণে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চাইতে ১ থেকে ৩ফুট বৃদ্ধি পাবে এই সতর্ক বার্তা দেয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহরুল হক বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বিষয়টি আমরা অবগত। আমাদের কর্মকর্তারাও সতর্ক রয়েছেন। তবে মেঘনার পানির উচ্চতা বাড়লেও বেশি সময় স্থায়ী হয় না। আজকে বিকেলে জোয়ারের সময় মেঘনার পানি বিপৎসীমা ৪ সেন্টিমিটারের অধিক পয়েন্ট ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।