চিলমারী কলেজের অধ্যক্ষ্যের র্দূনীতি

এফএনএস (মোঃ সিদ্দিকুল ইসলাম সিদ্দিক; চিলমারী, কুড়িগ্রাম) :
: | আপডেট: ৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম : | প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০১:৩৮ এএম
চিলমারী কলেজের অধ্যক্ষ্যের র্দূনীতি

কুড়িগ্রামের চিলমারী মহিলা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জীতেন্দ্র নাথ বর্মনের অদক্ষতা, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়োগ বাণিজ্য ও কলেজের জমি অধিগ্রহণের টাকা তছরুপসহ আর্থিক র্দূনীতির বিরুদ্ধে তদন্তের দাবীতে কলেজটির শিক্ষকদের ২০২১ সাল থেকে চলে আসা ধারাবাহিক সর্বশেষ মানববন্ধন ও আন্দোলনের চাপে অনেকটা বাধ্য হয়েই ডিসি আরীফ গর্ভানিং বডির মিটিং ডাকেন এবং অভিযোগ তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। একই সাথে তদন্ত কমিটিকে অভিযোগ গুলি তদন্ত সাপেক্ষে তদন্ত রিপোর্ট তার নিকট দাখিল করতে বলেন। তদন্ত কমিটি তাদের তদন্তে কয়েক লক্ষ টাকার র্দূনীতির সত্যতা পান এবং সে বিষয়ে ডিসি আরীফের নিকটা তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরও ম্যানেজ আ’লীগপন্থী ডিসি আরীফ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোন প্রকার আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করেননি। উল্টো ডিসি আরীফ কলেজ সভাপতির ক্ষমতা বলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জীতেন্দ্র নাথের সাথে যোগসাজস করে কলেজের বিভিন্ন উন্নয়ন ও কলেজ পরিচালন ব্যয় দেখিয়ে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও তার যৌথ স্বাক্ষরে কলেজর ব্যাংক একাউন্ট থেকে উত্তোলন করে ভূয়া ভাউচার বানিয়ে ব্যয় সমূহ তিনি নিজেই অনুমোদন দিয়ে চালিয়ে দেনে। উক্ত ডিসির আমলের কলেজের সকল আয়- ব্যয় সমূহ কখনো কোন গর্ভানিং বডির সভায় উপস্থাপন করেননি এমন কি সভার অনুমোদন রেজুলেশন ভুক্ত পর্যন্ত করেননি। আজও ডিসি অফিসে সেই প্রতিবেদনটি লাল ফিতায় বন্দি হয়ে আছে। সাধারণ শিক্ষকরা জানিয়েছেন, প্রতিবেদন টি আলোর মুখ আজও দেখেনেনি। অপরদিকে আজও র্দূনীতিতে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কোন অদৃশ্য ক্ষমতার বলে এখনো বহাল তবিয়তে একই পদে বসে তার কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে সুখ্যাত সেই কলেজটি র্দূনীতি, প্রশাসনিক অদক্ষতা এবং নানা অনিয়মের কারনে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছে মর্মে এলাকাবাসী সূত্রে জানাগেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষকদের নিকট থেকে জানা যায়, গত ২০২৩ ইং সালের ১০ জুলাই তারিখে দুর্নীতিগ্রস্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জীতেন্দ্র নাথ বর্মনের পদত্যাগ চেয়ে শিক্ষকদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবার পর দিন ডিসি আরীফ অনেকটা বাধ্য হয়েই কলেজ গর্ভনিং বডির সভা তার নিজ অফিস কক্ষে ডাকেন। সভায় তিনি দু’জন শিক্ষক প্রতিনিধি সহ গর্ভানিং বডির সকল সদস্য কে হুমকী দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে কুড়িগ্রামে পাঠিয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর খুব কাছের একজন মানুষ উল্লেখ করে বলেন, তার ৫৯ টি গোপন সোর্স আছে। তারা তাকে সবসময় জেলার প্রতিটি মানুষকে পর্যবেক্ষণ করে তাকে নিয়মিত রিপোর্ট দিয়ে থাকে। সুতরাং কলেজ গর্ভনিং বডির বাপ-দাদা কে কি করতো তিনি সেটা জানেন। তিনি কলেজ সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক ব্যক্তির হাড়ির খবর জানেন উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পক্ষ অবলম্বন করে তার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের আনিত অভিযোগ গুলি ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করে ব্যার্থ হন। উক্ত মিটিং এ প্রতিষ্ঠাতা কয়েকজন সদস্যের জোড়ালো প্রতিবাদ ও ভূমিকা দেখে অবশেষে তিনি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে বাধ্য হন। উক্ত তদন্ত কমিটির আহব্বায়ক করা হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মোঃ ওয়াজেদুল হাসানকে। অপর দু’জন সদস্য হলেন শিক্ষক প্রতিনিধি মোঃ নাজমুল হুদা পারভেজ এবং বিদ্যোৎসাহি সদস্য আশরাফুল ফরিদ। উক্ত তদন্ত কমিটি ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ইং তারিখে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জীতেন্দ্র নাথ বর্মনের বিরুদ্ধে ১৯ লক্ষ ষাট হাজার ৫৩৫/= টাকা ব্যয়ের ওপর আপত্তি জানিয়ে তাদের প্রতিবেদন পত্র ডিসি আরীফের নিকট জমা দেন যার অফিস ডকেট নাম্বার- ডি-৪৩১-২৪১১১২০২৪ । তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাবার পরও ডিসি আরীফ কাল ক্ষেপন করতে থাকেন। তার এই কাল ক্ষেপন আন্দোলনকারী শিক্ষকদের মধ্যে ডিসর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ দানাবাধে। পরে তারা অসর্মথিতসূত্রে জানতে পারেন জীতেন্দ্র নাথ বর্মন ডিসির সিএ আল আমীনের মাধ্যমে ডিসিকে ইতোমধ্যে বিপুল অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ফেলেছে। এই সংবাদের উপর ভিত্তি করে শিক্ষকরা ডিসি আরীফের সাথে তার অফিসে দেখা করে জানতে চান প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরও তিনি কেন কোন ভ’মিকা গ্রহণ করছেন না। শিক্ষকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি তাদেরকে জানান, প্রতিবেদনটি এক পাতা তিনি পড়েছেন। বাকীটা পড়ে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন। উল্লেখ্য ৯ পাতার তদন্ত প্রতিবেদনটি পড়া তিনি শেষ করতে পারেননি। এদিকে ডিসি আরীফ যে কমিটিতে ছিলেন উক্ত কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। যার কারণে নতুন আহব্বায়ক কমিটি গঠনের প্রয়োজন দেখা দেয়। অপরদিকে চতুর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জীতেন্দ্র নাথ বর্মন অজ্ঞাত কারনে ডিসি আরীফ আতংকে ভূগছিলেন। তাই তিনি আহব্বায়ক কমিটি থেকে ডিসি আরীফকে বাদ দিয়ে উক্ত সময়ে চাকরিরত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হারুণ অর রশিদ কে আহব্বায়ক কমিটির আহব্বায়ক হিসেবে তার বাই নেম ও পদবী উল্লেখ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যায় থেকে অনুমোদন নিয়ে আসেন। যে বিষয়টি প্রশ্ন বিদ্ধ। কারণ উপজেলা পর্যায়ের কলেজ সমূহে আহব্বায়ক বা সভাপতি হতে পারেন পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক কিংবা তার নির্বাচিত প্রতিনিধি। এ ক্ষেত্রে এসব আইন -কানুনের কোন তোয়াক্কা করা হয়নি মর্মে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জীতেন্দ্র নাথ বর্মন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করলেও নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্বেই অজ্ঞাত কারনে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন হঠাৎ স্থগীত ঘোষণা করলে কলেজের ভিতরে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এদিকে জিবির দুটি মিটিং করার পরপরই ৫ আগষ্টের ছাত্র-জনতার বিল্পবের মধ্য দিয়ে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয় এবং উক্ত আহব্বায়ক কমিটি বাতিল হয়ে যায়। বর্তমানে নতুন আহব্বায়ক কমিটির মাধ্যমে কলেজ চলছে। র্দূনীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তার পদে বহাল তবিয়তে থাকলেও শিক্ষকদের অভিযোগ ও তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী আজও তার বিরুদ্ধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বা সংশ্লিষ্ট কোন দপ্তর থেকে প্রয়োজীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও শিক্ষকরা কোন সুরাহা পায়নি। শিক্ষকদের অভিযোগ উক্ত চতূর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদেরকেও অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করে ফেলায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও এতোদিন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শিক্ষকদের দাবী আদায় না হওয়ায় এবং সাধারণ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কর্তৃক মামলা দায়ের করায় কলেজের ভিতরে প্রশাসনিক স্থবিরতা দেখা দেওয়ায় কলেজটির পাঠদান প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন যাবৎ মুখ থুবরে পড়েছে মর্মে অভিভাবক মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে। অনিশ্চিত হয়ে পরেছে কলেজটির ভবিষ্যৎ।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে