অর্থপাচারের অভিযোগে বসুন্ধরা চেয়ারম্যান ও স্ত্রীর সম্পদের হিসাব চাইলো দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৭ আগস্ট, ২০২৫, ০৯:৪১ পিএম
অর্থপাচারের অভিযোগে বসুন্ধরা চেয়ারম্যান ও স্ত্রীর সম্পদের হিসাব চাইলো দুদক

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও তাঁর স্ত্রী আফরোজা বেগমের বিপুল সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, জমি দখল ও অর্থপাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান থাকায় রোববার (১৭ আগস্ট) সংস্থাটি আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের সম্পদের বিস্তারিত হিসাব চেয়ে নোটিশ জারি করেছে।

দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪–এর ২৬(১) ধারা অনুযায়ী এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, আহমেদ আকবর সোবহানের নামে দেশে ৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি স্থাবর সম্পদ এবং প্রায় ১৮৪ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। সব মিলিয়ে তাঁর মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছে ২৫২ কোটি টাকার বেশি। অপরদিকে, তাঁর স্ত্রী আফরোজা বেগমের স্থাবর সম্পদ ১১৭ কোটি টাকার বেশি এবং অস্থাবর সম্পদ ৩৩৫ কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ এককভাবে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫৩ কোটি টাকা।

দুদকের অভিযোগ, বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এই বিপুল সম্পদ গড়ে তোলার পাশাপাশি এই দম্পতি বিদেশেও অর্থ পাচার করেছেন। আড়াই লাখ মার্কিন ডলার খরচ করে তাঁরা ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। এছাড়া সুইজারল্যান্ডের লুগানো শহরে এবং ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড ও আইল অব ম্যানের নিবন্ধিত কোম্পানির মাধ্যমে ব্যাংক হিসাব খুলে অর্থ পাচারের তথ্যও দুদকের হাতে এসেছে।

দুদক বলছে, নিজেদের নামে বা প্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে নানা স্থাবর–অস্থাবর সম্পদ দখলে রেখেছেন এই দম্পতি। এসব সম্পদ জ্ঞাত আয়-উৎসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই বিদেশে অর্থ স্থানান্তরের অভিযোগও রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে।

এই অনুসন্ধান শুধু আহমেদ আকবর সোবহান ও তাঁর স্ত্রীকে ঘিরেই সীমাবদ্ধ নয়; তাঁদের পরিবার এবং বসুন্ধরা গ্রুপের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চালাচ্ছে দুদক। রাজস্ব ফাঁকি, ঋণের অর্থ আত্মসাৎ, ভূমি জবরদখল ও অবৈধ অর্থ স্থানান্তরের মতো অভিযোগগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ক্ষমতার পরিবর্তনের পর গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে সাবেক সরকারের সুবিধাভোগী বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থা। ইতোমধ্যে এনবিআর, সিআইডি ও বিএফআইইউ বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকপক্ষের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেছে। আদালতও সোবহান পরিবারের আট সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ বছরের এপ্রিলে তাঁদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার সম্পদও অবরুদ্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।

সবশেষ জুন মাসে দুদক চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, আহমেদ আকবর সোবহানের দুই ছেলের যুক্তরাজ্যে পাচারকৃত সম্পদের তথ্য জানিয়ে সে দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এখন দেখা যাচ্ছে, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের তদন্ত ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী পরিবারের এই অনুসন্ধান শেষ পর্যন্ত কোন পরিণতির দিকে গড়ায়, সেটিই এখন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।a

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে