রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্য কোটা নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ভর্তি কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে আয়োজনের জন্য কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেল সোয়া ৫টায় অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ সংবাদকর্মীদের এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, শনিবার পোষ্য কোটা ইস্যুতে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধ্বস্তাধস্তির ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে—একটি পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট আভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি এবং অপরটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। কোটা নিয়ে সিন্ডিকেটে আলোচনা শেষে দ্রুত সময়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শনিবারের ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রোববার থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের দাবি, শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে, অন্যথায় কর্মসূচি চলবে। তবে রাকসু নির্বাচনের কার্যক্রম এ কর্মসূচির বাইরে থাকবে বলে তারা জানিয়ে দিয়েছেন।
পোষ্য কোটাকে ঘিরে টানা উত্তেজনা শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জরুরি একাডেমিক সভায় পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের পর। সভার পরপরই শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে এবং রাত পর্যন্ত আন্দোলন চালায়। শুক্রবার বিক্ষোভের পর কয়েকজন শিক্ষার্থী অনশনে বসেন। শনিবার বিকালে তারা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে এবং উপ-উপাচার্যের বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে, যেখানে শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ কয়েকজন আহত হন। কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন খানসহ বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
অবশেষে শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে রাত পৌনে ২টার দিকে ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করার ঘোষণা দেন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব এবং রোববার সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশ্বাস দেন। এরপর ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে হলে ফিরে যায়।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২ জানুয়ারি উপাচার্য পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর পর থেকে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। সর্বশেষ ১৭ সেপ্টেম্বর তারা ২১ সেপ্টেম্বর থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতির হুমকি দেন। এর প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার একাডেমিক সভায় ১০ শর্তে কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন, যা নতুন করে সংঘাতের জন্ম দেয়।