খুলনা মহানগরীতে চকলেট দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মহুরি কর্তৃক সাড়ে ৫ বছর বয়সী এক অবুজ শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। খুলনা মহানগরীর হোল্ডিং নং-৮/১, রূপসা স্ট্যান্ড রোড, ডাক্তার গলি এলাকার ভুক্তভোগী অবুজ শিশুর মা লম্পট মহুরি আবুবকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে খুলনা কেএমপি'র সদর থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং ৩৭, তারিখ-৩০-০৯-২০২৫ইং। রবিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে আসামী আবুবকর সিদ্দিক খুলনার আদালতে জামিন নিতে গেলে আদালত জামিন না দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম। আইনের নাম ও ধারা : ৯ (৪) (খ) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০।
মামলায় বলা হয়েছে, ২৮ সেপ্টেম্বর বেলা আনুমানিক সাড়ে ১১ টার দিকে সাড়ে ৫ বছর বয়সী শিশুটি বাসার সামনে খেলা করার সময় প্রতিবেশী অবসরপ্রাপ্ত মহুরি মো. আবু বকর সিদ্দিক (৭৫), চকলেট দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে রূপসা স্ট্যান্ড রোড, ডাক্তার গলির আসামীর শয়নকক্ষের ভিতর ডেকে নিয়ে তার বাসার রুমের দরজা বন্ধ করে যৌনকামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে আবুবকর সিদ্দিক মেয়েটিকে খাটের উপর শুয়াইয়ে হাত ধরে বলে, বেশি কথা বলবা না, বেশি কথা বললে মেরে ফেলবো। এমনকি আসামী শিশুটির শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। আসামীর সাথে শিশুটির ধস্তাধস্তিতও হয়। একপর্যায়ে লম্পট আবুবকরের নখের আচড়ের আঘাতে মেয়েটির স্পর্শকাতর স্থানে ফোলা জখম হয়।
নখের আচড়ে ব্যাথা অনুভব হলে শিশুটির ডাকচিৎকার করার চেষ্টা করা হলে তাকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি প্রদান করে। এমনকি এ ঘটনা কাউকে কিছু বললে শিশুটিকে হত্যা করার হুমকি দিয়ে আসামির ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়। ওই সময় শিশুটি তার নিজ বাসায় চলে যায়।
পরবর্তীতে ওইদিন রাত ১০ টার দিকে শিশুটি ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে কান্না করতে শুরু করলে তখন শিশুটির নিকট কান্না করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তার মাকে ঘটনার বিস্তারিত জানায়। তখন চিকিৎসার জন্য দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি বিভাগে ভর্তি করা হয়। বিষয়টি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়ে ভুক্তভোগী শিশুটির পরিবার।
এব্যাপারে নির্যাতিত শিশুটি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মহুরি মুরব্বি আমাকে ব্যথা দিয়েছে। শিশুটি আইনের কাছে অভিযুক্তের কঠোর শাস্তি দাবি করেছে। তার ভাষায়, আইন যেনো মুরব্বিকে বড় ধরনের শাস্তি দাবি করে।
শিশুটির মা বলেন, আমার সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী মেয়েটি সেদিন বাইরে খেলাধুলা করছিল। সেই সময় অপরাধী খুলনা কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত মুহুরী আবুবকর সিদ্দিক চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে এই জঘন্য কাজটি করে। এতে মেয়েটি গুরুতরভাবে আহত হয়, রক্তক্ষরণ শুরু হয় এবং এখনো অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে। আমার মেয়ে এখনো স্কুলে যায় না, বাসায় বসেই পড়ালেখা করে। আমার স্বামী ঢাকায় চাকরি করেন।
ওইদিন রাতে মেয়েটার শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে আমার মা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। দুই দিন ধরে চিকিৎসা চলে। পরে ৩০ তারিখ খুলনা সদর থানায় আমি মামলা করি।
তার ছেলে উল্টো রুহুল আমিন আমাকে এবং আমার পরিবারকে মামলা উঠিয়ে নিতে রাস্তাঘাটে হুমকি দিচ্ছে। বলছে, বিষয়টা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করিস না, মামলা তুলে নে, না নিলে তোদের ক্ষতি হবে এবং হত্যার হুমকিও দিয়েছে। আমি মনে করি এটি পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য ও নিকৃষ্ট অপরাধ।
তিনি আরও বলেন, আমি তার ফাঁসি চাই। আমার মেয়ের সঙ্গে যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে, সেটি যেন আর কোনো শিশুর সঙ্গে না ঘটে এই প্রার্থনাই করছি।
প্রতিবেশী ইমরান হোসেন রাব্বি বলেন, অপরাধী আবুবকরের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি এবং চাই, যেনো এমন নিকৃষ্ট ঘটনা আর কখনো কোন অবুজ শিশুর সাথে না ঘটে।
প্রতিবেশী রাসেল বলেন, অপরাধীর নাম বক্কার। সে খুলনা কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত মুহুরী। শুনেছি, এর আগেও সে এমন নিকৃষ্ট কাজ করেছে বা করার চেষ্টা করেছে বলে এলাকায় গুঞ্জন আছে। এই অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। প্রতিবেশী শাহেদা বেগম বলেন, বক্কার মুহুরীর সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা পুনরায় না ঘটে তার জন্যও কড়াকড়ি দাবি করি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ওসি স্যারের মাধ্যমে জানতে পারলাম ধর্ষণের চেষ্টার আসামী আবুবকর আদালতে জামিন নিতে গেলে তাকে জামিন না দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।
খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, শিশু ধর্ষণের চেষ্টার আসামী আবু বক্কার সিদ্দিককে গ্রেফতারের জন্য আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আত্মগোপনে থাকার কারনে আটক করতে পারিনি। পরে আসামী আবুবকর আদালতে জামিন নিতে গিয়েছিলো। জামিন নিতে গেলে আদালত জামিন না মুঞ্জর করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে।