আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করুন

এফএনএস : | প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৫:২৯ এএম
আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করুন

পাঠ্যবই ছাপানোর ক্ষেত্রে গত এক যুগে দুর্নীতি ও নিম্নমানের কাজের যে তথ্য উঠে এসেছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এর মধ্যে ২০২৩ সালেই ২৬৯ কোটি টাকার অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এবং গত ১২ বছরে ৩ হাজার কোটি টাকা লোপাটের পরিসংখ্যান জনমনে প্রশ্ন তুলেছে সরকারের দায়িত্বশীলতা ও প্রশাসনিক তদারকির বিষয়ে। বইয়ের মান ও আকার কমিয়ে এবং নিউজপ্রিন্টে ছাপিয়ে লোপাট করা হয় ২৪৫ কোটি টাকা, আর অযাচিত বিল, অতিরিক্ত সম্মানী, আয়কর কর্তন না করা, অগ্রিম সমন্বয় না করাসহ নানা কারণ দেখিয়ে আরও প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এবার সময়মতো পাঠ্যবই ছাপানো ও মানে আপস না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বর্তমানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৪০ কোটি ১৪ লাখ ৯৫ হাজার ৮৪১টি পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ চলমান। গতবারের চেয়ে এবার কাগজের পুরুত্ব ও উজ্জ্বলতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত বছর কাগজের পুরুত্ব ছিল ৭০, আর উজ্জ্বলতা ছিল ৮০। এ বছর কাগজের পুরুত্ব ৮০ এবং উজ্জ্বলতা ৮৫ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বার্স্টিং ফ্যাক্টর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ১৬। এক সংবাদপত্রের খবরে জানা যায়, এনসিটিবি বলে দিয়েছে, জানুয়ারির এক তারিখেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই চলে যাবে। যদি কোনো ছাপাখানা মালিক এর ব্যত্যয় করেন কিংবা মান ঠিক না থাকে, তাহলে ডিপিএমের (ডিরেক্ট পারচেজ ম্যানেজমেন্ট) মাধ্যমে আর্মি প্রিন্টিং প্রেস বই ছাপিয়ে বই সরবরাহ করবে। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, টেন্ডারের সব শর্ত মেনে পাঠ্যবই ছাপার ঠিকাদারি নিলেও এবারও কাগজের টেকসই ক্ষমতা (বার্স্টিং ফ্যাক্টর) কমানোর অপচেষ্টা করছেন একশ্রেণির মুদ্রাকর। বেশি মুনাফার লোভে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে চাপ দিয়ে বার্স্টিং ফ্যাক্টর ১৬ থেকে নামিয়ে ১০ করতে চান তারা। জানা গেছে, বইয়ে ব্যবহৃত কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমাতে পারলে শত কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা হবে। এই কারণে কমানোর এই তদবিরে কিছু ছাপাখানার মালিকরা রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। রাজধানীর প্রেসপট্টি হিসেবে খ্যাত মাতুয়াইলে দেখা গেছে, অধিকাংশ প্রেসে বই মুদ্রণের কাজ চলছে। ছাপাখানায় দরপত্রে উল্লিখিত কাগজের উজ্জ্বলতার শর্ত অনুযায়ী পাঠ্যবই ছাপাচ্ছে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান। তবে কয়েকটি ছাপাখানায় নিম্নমানের (নিউজপ্রিন্ট) কাগজে বই ছাপানো হচ্ছে। বই প্রিন্টের পর এর উজ্জ্বলতা আরো কমে যাচ্ছে। এই ঘটনাগুলো দেশের শিক্ষা খাতে দুর্নীতির গভীর সংকটকে চিহ্নিত করে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এ ধরনের অব্যবস্থাপনা ও লুটপাট অগ্রহণযোগ্য। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এসব সমস্যার সমাধানে কার্যকর ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে