র্নথ ওয়স্টে পাওয়ার জনোরশেন কোম্পানি

কাজী আফসার'র পুনরায় চাকুরীর মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা

এফএনএস (শাহ্ জামাল; ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া) : : | প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর, ২০২৪, ১১:০৯ পিএম : | আপডেট: ৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম
কাজী আফসার'র  পুনরায় চাকুরীর মেয়াদ  বাড়ানোর চেষ্টা

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আবসার উদ্দীন আহমেদ’র চাকুরীর আবারো বাড়ানোর সকল প্রক্রিয়া শেষের দিকে। ইতিমধ্যে নর্থ-ওয়েস্ট বোর্ডের কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স কমিটি তার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে যা অতিশীঘ্রই বোর্ডে উপস্থাপনের জন্য অপেক্ষাধীন। এই নিয়োগ কার্যকর হলে জুলাই বিপ্লবের গন অভ্যুথানের মূল স্পিরিটই ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে নর্থ ওয়েষ্ট’র সর্ব স্তরের কর্মকর্তারা মনে করেন। অন্য দিকে, ফ্যাসিষ্ট সরকারের দোসরের চাকুরী নবায়ন তো দূরের কথা এখনই তাকে অব্যবহতি দিয়ে সৎ যোগ্য দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার দাবী জানিয়ে চেয়ারম্যান’র কাছে লিখিত দাবী জমা দিয়েছে। সূত্র জানায়, ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর কাজী আবসার উদ্দীন আহমেদ ২০২৩ সালের ৭ মে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। তার নিয়োগ প্রক্রিয়াও ছিল নাটকীয়তায় ভরা। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। প্রথম নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ বোর্ডে ১ম হয় মাসুদুল ইসলাম। ৩য় স্থান লাভ করে কাজী আবসার উদ্দীন আহমেদ। এরপরো ১ম,২য় ও ৩য় মেধাক্রম করে সুপারিশ সহ অনুমোদনের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠায়। আবসার তৎকালীন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের স্নেহধন্য ও ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদপুষ্ট, পানি-বিদ্যুৎ প্রকৌশল পরিষদ তথা বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতা এবং রাজশাহী অঞ্চলের ভোটার বিহীন সরকারের রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা এর ভাগিনা। তাকে নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যেই মেধা তালিকায় প্রথম হওয়ার পরেও অ-কারিগরি কর্মকর্তা উল্লেখ করে মাসুদুল ইসলাম কে নিয়োগ না দিয়ে প্রক্রিয়াটি বাতিল করা হয়। তৎকালীন সময়ে বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা হলেও কোন কাজ হয়নি। নানা নাটকীয়তায় দ্বিতীয় নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০২৩ সালের ৭মে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। দ্বিতীয় বারের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আলোচিত আবসার ফ্যাসিস্ট সরকারের ছত্রছায়ায় নিয়োগ পেয়ে প্রথম বারের মেধাক্রমে তার উপরের স্থানে থাকা নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির কর্মকর্তাসহ সৎ ও দক্ষ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাগনকে তার চুক্তিনবায়নের পথে প্রতিবন্ধকতা মনে করে নানাবিধ হয়রানি করেন। অনুসন্ধান করে দেখা যায় যে, প্রথম বারের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মেধাক্রমে তার উপরে থাকা একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে সম্পূণ বিনাকারণে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে ঢাকায় দীর্ঘদিন ক্লোজ করে রাখেন। এটি ভবিষ্যতে তার নিজের চুক্তিনবায়নের পথে প্রতিবন্ধকতা দূরকরার অপকৌশল হিসেবে দেখাহয়। সূত্র জানায়, কোম্পানিতে যোগদান করেই তিনি নিজের জন্য একটি এবং পরিবারের ব্যবহারের জন্য দুইটি গাড়ি বরাদ্দ নেন। একমাত্র চলমান প্রকল্পের সমাপ্তি ঘনিয়ে আসায় তিনি প্রকল্প ভেরিয়েশনের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থ আয়ের উপায় খুঁজতে শুরু করেন। ম্যানেজমেন্ট মিটিং-এর নামে ঠিকাদারের অর্থে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে চীনে ভ্রমণের আয়োজন করেন, যা সরকারি আদেশে উল্লেখিত নিয়মাবলীর পরিপন্থী। এমনকি, ওই ভ্রমণ থেকেই ঠিকাদারের অর্থে সিঙ্গাপুরে পরিবার নিয়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রমোদ ভ্রমণে যান বলে জানা গেছে। যার বিষয়ে তার সরকারি আদেশে উল্লেখ নেই। মধুমতী ঐঋঙ ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের খড়হম ঞবৎস ঝবৎারপব অমৎববসবহঃ (খঞঝঅ) সংক্রান্ত কাজে তার ঘনিষ্ট বন্ধু ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারস্, বাংলাদেশ (আইইবি)’র বিতর্কিত সাবেক প্রেসিডেন্ট ও পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের ভোটার বিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে মনোনীত তথাকথিত সংসদ সদস্য আবদুস সবুরের সাথে যোগসাজশে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চক্রান্ত কোম্পানির দেশপ্রেমিক প্রকৌশলী বৃন্দের তৎপরতায় ব্যর্থ হয়। কিন্তু ফরমায়েশী দরপত্র আহ্বান ও পরবর্তীতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদানে বিলম্বের কারণে কোম্পানি তথারাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য অর্থের অপচয় হয়। তাছাড়া কোম্পানির পুরাতন গাড়ী সমূহ নিজের পরিচিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা মেরামতের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় অথচ নিম্নমানের মেরামত কাজের জন্য কয়েক দিন পর গাড়ী সমূহ পুনরায় আগের মত বিকল হয়ে যায়। নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানীর কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নর্থ ওয়েষ্টে যোগদানের আগে কাজী আবসার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী এবং বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশীপ কোম্পানির প্রকিউরমেন্ট অফিসার ও পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার দীর্ঘ কর্ম জীবনে উল্লেখ যোগ্য কোনো কাজের নজির নেই। শুধুমাত্র চাটুকারিতা এবং সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং ফজলে হোসেন বাদশার ভাগ্নে হওয়ার সুবাদে নর্থ-ওয়েস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদটি হাতিয়ে নেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে চাটুকারিতা বড় যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হলেও, বিপ্লবের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান সরকারের অধীনে পুনরায় তার মেয়াদ বাড়ানোর অপচেষ্টার বিষয়ে নর্থ ওয়েস্টের সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারিবৃন্দ গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছে। তবে জানা গেছে, ইতিমধ্যে নর্থ-ওয়েস্ট বোর্ডের কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স কমিটি ইতোমধ্যে তার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে যা অতিশীঘ্রই বোর্ডে উপস্থাপনের জন্য অপেক্ষাধীন রয়েছে। অন্য দিকে, তার নিয়োগ নবায়নে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে বৈষম্য বিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ। গত ২৭ নভেম্বর সংগঠনের পিইএমআর/এনডাব্লুউপিজিসিএল/১/২৭১১২৪ নং স্বারকে কাজী আবসারের অব্যহতি চেয়ে নর্থ ওয়েষ্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানীর চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন জমা দিয়েছে। আবেদন পত্রে বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী অধিদপ্তর’র সমন্বয়ক হিসাবে প্রকৌশলী ওলিউল্লাহ স্বাক্ষর করেন।  বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিরা মনে করেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কর্মকান্ডের সাথে সরাসরি যুক্ত স্পর্শকাতর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের পুনরায় চাকুরীর মেয়াদ বাড়ানো হলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিদ্যুৎ সেক্টর। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও পঙ্গুত্ববরণকারী অগণিত ছাত্র জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের মূল স্পিরিটের পরিপন্থীও এই দোসরদের পূর্নবাসন করা।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে