আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সিলেট বিভাগের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে অভূতপূর্ব প্রস্তুতি। এবার আর তদবির, চা-চক্র কিংবা কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘হোটেল লবিতে ঘোরাঘুরি’ নয়-বিএনপির মনোনয়ন নির্ধারণে আসছে তথ্যভিত্তিক ‘ডাটাবেজ রাজনীতি’। দলের হাইকমান্ড জানিয়ে দিয়েছে, যার র্যাংকিং ভালো, তাকেই দেওয়া হবে টিকিট।
রোববার (১৯ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট বিভাগের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত থাকবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মনোনয়ন নয়, ‘রাজনৈতিক সিভি’র পরীক্ষা দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থীদের মূল্যায়নের জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি ডিজিটাল ‘ডাটাবেজ সিস্টেম’, যেখানে পাঁচটি প্রধান যোগ্যতা ও পাঁচটি অযোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে প্রার্থীদের র্যাংকিং করা হচ্ছে। মূল যোগ্যতার মানদণ্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. অতীত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
২. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়তা
৩. জনসম্পৃক্ততা
৪. সাংগঠনিক দক্ষতা
৫. পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য
অন্যদিকে অযোগ্যতার মানদণ্ডগুলোতে রয়েছে বিদ্রোহের ইতিহাস, ফৌজদারি অপরাধ, আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগ, স্থানীয় অপরাধে সম্পৃক্ততা এবং নির্বাচনী এলাকায় গ্রহণযোগ্যতার ঘাটতি। এই ডাটাবেজে প্রতিটি তথ্য যাচাই করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রার্থীদের ‘র্যাংকিং’ তৈরি করা হচ্ছে, যা মনোনয়ন নির্ধারণ কমিটির কাছে পাঠানো হবে।
ঢাকামুখী সিলেট বিএনপি: শতাধিক নেতার সমাবেশ সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে উৎসাহ ও প্রতিযোগিতা তুঙ্গে। মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার বিভিন্ন আসনের শতাধিক নেতা এরই মধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছেন বা রওনা হচ্ছেন। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কারণে অধিকাংশ প্রার্থী বিমানযোগে রাজধানীতে যাচ্ছেন।
সিলেট জেলার চিত্র: কে কোথায় এগিয়ে?
সিলেট-১ থেকে সিলেট-৬ পর্যন্ত প্রতিটি আসনেই রয়েছে হেভিওয়েট প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
বিশেষ করে:
ক্স সিলেট-১: খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বনাম আরিফুল হক চৌধুরী
ক্স সিলেট-২: তাহসিনা রুশদীর লুনা এগিয়ে, হুমায়ুন কবিরকে না যাওয়ার পরামর্শ
ক্স সিলেট-৩: এম. এ. মালিক, এম. এ. সালাম, আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীসহ সাতজন
ক্স সিলেট-৪: মিফতাহ সিদ্দিকী ও আব্দুল হেকিম চৌধুরী
ক্স সিলেট-৫: ‘চাকসু মামুন’, পাপলু, আশিক চৌধুরীসহ ছয়জন
ক্স সিলেট-৬: ড. এনামুল হক চৌধুরী, ফয়সল আহমদ চৌধুরী, এমরান আহমদ চৌধুরী প্রমুখ
'বসুন্ধরাকরণ' নয়, এবার সিদ্ধান্ত নেবে ডাটাবেজ দলীয় নীতিনির্ধারকরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এবার কোনো আপস নয়। এক আসনে এক প্রার্থী-এই নীতিতে অনড় থাকছে বিএনপি। বিদ্রোহী প্রার্থিতার আশঙ্কায় আগে থেকেই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে: দলের সিদ্ধান্ত না মানলে বহিষ্কার অনিবার্য।
প্রাথমিক তালিকা রোববার ঘোষণা নাও হতে পারে, তবে কঠোর নির্বাচনী নির্দেশনা আসবে বলেই জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা। বসুন্ধারার গন্ধ নয়, এবার বিএনপি চায় মাঠে পরীক্ষিত, জনপ্রিয় এবং রাজনৈতিকভাবে পরিচ্ছন্ন প্রার্থী।
বাস্তবমুখী রাজনীতি ও নতুন ধারা বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির এই ‘ডাটাবেজ নির্ভর মনোনয়ন’ রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি নতুন ধারা। যেখানে আবেগের জায়গা কম, তথ্য ও কার্যক্রমই মুখ্য। প্রবাসী, যুবনেতা, সাবেক জনপ্রতিনিধি, এমনকি স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নেতারাও এবার সমান স্ক্যানারের নিচে।
সিলেট বিএনপির এই নতুনধরনের প্রার্থী যাচাই প্রক্রিয়া শুধু দল নয়, দেশের রাজনীতিতেই এক ব্যতিক্রমধর্মী ধাপ। রোববারের বৈঠক কেবল প্রার্থী নির্বাচন নয়, বিএনপির ভবিষ্যত সাংগঠনিক নীতি ও নির্বাচনী কৌশলের দিকনির্দেশনাও দিতে পারে। ডাটাবেজের মাধ্যমে এবার দল বেছে নিচ্ছে মাঠের খেলোয়াড়, না যে বেশি দেখায়, বরং যে বেশি কাজ করে।