আইসিসির বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২৩-২৫ চক্রের ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে ভারত। প্রায় নিশ্চিতই ছিল ফাইনালের জায়গাটা। তবে শেষের দিকে নিউজিল্যান্ডের কাছে ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশ এবং বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩-১ ব্যবধানে হেরে ফাইনালে উঠতে পারেনি টিম ইন্ডিয়া। টেস্টে ক্রিকেটারদের অফ ফর্ম নিয়ে বেশ ভুগতে হয়েছে ভারতকে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের তিন ম্যাচে একদমই হাসেনি রোহিতের ব্যাট। এর আগের বেশ কিছু সিরিজেও বিবর্ণ ছিলেন রোহিত শর্মা। যে কারণে সিডনিতে শেষ টেস্টে তাকে একাদশের বাইরে রেখে মাঠে নামে ভারত। কোহলি পার্থ টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকালেও বাকি ম্যাচগুলোতে প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি। ফলে এই দুই ব্যাটিং গ্রেটের দলে জায়গা পাওয়া, না পাওয়া এবং অবসরের ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সিডনি টেস্ট শেষে অবশ্য রোহিত-কোহলিদের ভবিষ্যত নিতে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ভারতের প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর। বরং তাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন গম্ভীর। তবে তার মতে, সবকিছুর আগে প্রাধান্য পাওয়া উচিত দেশ এবং দলের। সংবাদ সম্মেলনে গম্ভীর বলেন, ‘দেখুন আমি কোনো প্লেয়ারের ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলতে পারি না, এটা তাদের উপরেও নির্ভর করছে। তবে আমি যা বলতে পারি যে তাদের মধ্যে এখনও ক্ষুধাটা রয়েছে, এখনও তাদের প্যাশন রয়েছে, তারা বেশ শক্ত মানসিকতার মানুষ। আশা করছি তারা ভারতের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে যতটুকু বুঝতে পারি, তারা যে পরিকল্পনাই করুক না কেন, ভারতের মানুষের ভালোর কথা চিন্তা করেই করবে।’ শেষ ম্যাচে রোহিতের না খেলার ব্যাপারে গম্ভীর জানান, ‘এ ব্যাপারে অনেক কথা হয়েছে, তবে ব্যক্তিরা আসবে যাবে, দেশ এবং দলই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে সবসময়। আমি বিশ্বাস করি সবাই, এমনকি আমিও দলকে সবকিছুর উর্ধ্বে রেখে কাজ করা উচিত। রোহিত শর্মা এ ব্যাপারে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এ ব্যাপারে আমাদের অনেক কথা হয়েছে। দায়বদ্ধতার ব্যাপারে অনেক কথা বলেছি এবং এটা এমন কিছু যা একদম উপর থেকে আসতে হবে। গত ম্যাচে রোহিত এসব খুঁজে বের করেছে।’ চোটের কারণে ম্যাচের শেষ দিকে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক জাসপ্রীত বুমরাহর ছিটকে যাওয়ার ব্যাপারে গম্ভীর জানান, ‘প্রথম কথা হচ্ছে, আমি এটা বলতে চাই না যে জাসপ্রীত বুমরাহ ছিল না দেখে আমরা ফলাফল পাইনি। অবশ্যই কিছু মুহূর্ত আমাদের পক্ষে এসেছে এবং দারুণ হত যদি ফলটাও পক্ষে আসত। তবুও আমাদের দলে পাঁচজন বোলার ছিল এবং একটি ভালো দল ম্যাচটা জিতেছে যা কোনো একজন ব্যক্তির উপর নির্ভরশীল নয়। হ্যাঁ আমরা ফলটা পাইনি। ফলাফল আমাদের পক্ষে আসেনি, এখানে আমরা সিরিজটা হেরে গেছি, একদম সোজা কথা।’ বুমরাহর চোট প্রসঙ্গে গম্ভীর বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই। মেডিকেল টিম তাকে নিয়ে কাজ করছে। ফলে তারা সঠিক সময়ে সঠিক তথ্যটা দেবে।’ সিরিজ নিয়ে গম্ভীরের ভাষ্য, ‘এখানে কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। আসলে এখানে কিছু নয়, অনেক ইতিবাচক দিক আছে। এই দলে অনেক ছেলে ছিল যারা প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফরে এল এবং আপনারা জানেন ব্যাপারটা সামলানো কতটা কঠিন। জানি না কত বছর পর পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেললো তারা। যার কথাই বলুন না কেন, যশস্বী (জাইসওয়াল), নিতিশ (কুমার রেড্ডি), ওয়াশিংটন সুন্দর হোক বা আকাশ দ্বীপ হোক, তারা সবাই (প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফরে এল)। আমি ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে আলোচনা করতে চাই না, তবে মোহাম্মদ সিরাজের ভাবভঙ্গি অসাধারণ ছিল।’ গম্ভীরের মতে, ‘আমার অত বেশি দেখা হয়নি, তবে আমি মনে করতে পারি না এমন কোনো প্লেয়ার রয়েছে যে কিনা সবসময় ১০০% ফিট না হয়েও প্রতি বলে রান করতে পেরেছে। এখানেই দেশের হয়ে খেলার ব্যাপারটি আসছে। আমরা লড়াই চালিয়ে গিয়েছি। আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছি এবং অবশ্যই আপনারা সংখ্যা নিয়ে কথা বলতেই পারেন। জাসপ্রীত বুমরাহ দারুণ একটি সিরিজ কাটিয়েছে। জাইসওয়াল রান পেয়েছে, আরও অনেকেই রান পেয়েছে। তবে যদি ভাবভঙ্গির কথা বলেন আমার কাছে মোহাম্মদ সিরাজকে দুর্দান্ত মনে হয়েছে।’ গম্ভীর প্রধান কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া নিয়ে মোট তিনটি টেস্ট সিরিজ খেলেছে ভারত। বাংলাদেশ বাদে হেরেছে বাক দুইটিতেই।