ফুলবাড়িয়া মার্কেট-২: অনিয়মের চক্র ভাঙবে কবে?

এফএনএস | প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৩:১৯ পিএম
ফুলবাড়িয়া মার্কেট-২: অনিয়মের চক্র ভাঙবে কবে?

রাজধানীর গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া মার্কেট-২ যেন নগর পরিচালনায় চরম অব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো এবং আইনের শাসনের দুর্বলতার এক দীর্ঘস্থায়ী প্রতিচ্ছবি। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বেজমেন্টসহ ৯১১টি অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করেছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেই উচ্ছেদ অভিযানই পরিণত হয়েছে আরেক দফা অনিয়মের সুযোগে। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে দখলদারদের দল, বদলায়নি কায়দা। সাবেক দুই মেয়রের দ্বন্দ্বের জেরে শুরু হওয়া অস্থিতিশীলতার সুযোগে নকশাবিহীন ২১০টি নতুন দোকান গড়ে উঠেছে। প্রশাসনিক নজরদারি থাকা সত্ত্বেও সিঁড়ির নিচে, টয়লেট ভেঙে, লিফটের সামনে কিংবা ফাঁকা জায়গায় দোকান বসানোর ঘটনা কোনোভাবেই ব্যাখ্যা করা যায় না। আরও বিস্ময়কর হলো-করপোরেশনের নির্মিত ষষ্ঠ থেকে অষ্টম তলার ৬৮৪টি বরাদ্দহীন দোকান পর্যন্ত তালা ভেঙে ভাড়া দিয়ে দিয়েছে একটি প্রভাবশালী চক্র। ২০২০ সালে যে বেজমেন্ট উচ্ছেদ করে “মডেল মার্কেট” গড়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, আজ একই বেজমেন্টে ফের দোকান নির্মাণের পাঁয়তারা। উচ্চ আদালতের পুনর্বাসন আদেশকে ঢাল বানিয়ে যে অসাধু উপায়ে বেজমেন্টে দোকান তৈরির চেষ্টা চলছে, তা শুধু আইনকে ব্যঙ্গই নয়-মার্কেটের নিরাপত্তাকেও বিপন্ন করছে। করপোরেশনের কর্মকর্তারা অভিযান চালালে শ্রমিকদের পালিয়ে যাওয়া কিংবা নির্মাণসামগ্রী রেখে দেওয়া-এসব ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট যে দখলদারদের রয়েছে শক্তিশালী রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া। মার্কেটের কার পার্কিং ইজারা নিয়ে মামলা চলমান থাকলেও করপোরেশনের রসিদ ব্যবহার করে তৃতীয় পক্ষের চাঁদাবাজি-নগর পরিচালনাকে উপহাস করার সামিল। বিভিন্ন সময় ভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দখলদারিত্বের বর্ণনা প্রমাণ করে যে প্রশাসন দলীয় প্রভাবমুক্ত থাকতে ব্যর্থ হয়েছে। মার্কেটব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাদের পারস্পরিক দোষারোপ, চাঁদাবাজির অভিযোগ এবং সমিতির দখলদারি-সব মিলিয়ে ফুলবাড়িয়া মার্কেট-২ আজ একটি ‘আইনশূন্য বাণিজ্যকেন্দ্র’। ডিএসসিসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা “দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে” বলে সীমিত মন্তব্য করলেও মাঠপর্যায়ে তার প্রতিফলন এখনও চোখে পড়ে না। এ অবস্থায় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। পুরো মার্কেটজুড়ে পূর্ণাঙ্গ শারীরিক জরিপ ও নকশা-অডিট; অবৈধ দোকান উচ্ছেদ ও চাঁদাবাজি রোধে স্বচ্ছ ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত যৌথ টাস্কফোর্স; আদালতের পুনর্বাসন নির্দেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করে ক্ষতিগ্রস্তদের স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় দোকান বরাদ্দ প্রদান। উচ্ছেদ-নির্মাণ-দখলের এই চক্র যতদিন বন্ধ না হবে, ততদিন নগরজীবনের নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে না। রাজধানীর বাণিজ্যকেন্দ্রগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও পরিকল্পনাসম্মত রাখা-এখন সময়ের দাবি, দায়িত্বের নয়-কর্তব্যের প্রশ্ন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে