বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলায় হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান প্রকৃতি পরিচালিত পাঁচটি প্রোডাকশন ইউনিট বিবর্তন হ্যান্ডমেইড পেপার প্রজেক্ট, কেয়াপাম হ্যান্ডিক্রাফটস, তরুলতা ক্রাফটস, জোবারপাড় এন্টারপ্রাইজ এবং বাগধা এন্টারপ্রাইজ এর প্রকৃতির রজতজয়ন্তী ও পাঁচ ইউনিটের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৩ ডিসেম্বর শনিবার আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের কালুরপাড় নামকস্থানে হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান প্রকৃতি’র মাঠে এই রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠিত হয়। রজতজয়ন্তীর আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রকৃতির নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার দাস।
হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান প্রকৃতি’র রজতজয়ন্তীতে স্বপন কুমার দাস বলেন, লতাপাতা দিয়ে আমরা বিশ্বজয় করেছি। বাড়ির চারপাশে লতাপাতা ও জলাশয়ের কচুরিপানা দিয়ে হাতে বানানো তৈজসপত্র আমরা বিশ্ব বাজারে বিখ্যাত হয়ে পড়েছি। লতাপাতাও ঘাস দিয়ে হাতে বানানো মালামাল বিশ্বের ৪২টি দেশের বাজার দখল করে নিয়েছি। এই বাজার তৈরির পিছনে রয়েছে ৬ হাজার নারী। আমাদের দেশের নারীদের হাতে তৈরি নিখুঁত জিনিস দেখে বিদেশীরা আকৃষ্ট হয়েছে। তারা বলেন, এগুলো কি ধরণের মেশিন দিয়ে তৈরি করা হয়। আমি (স্বপন কুমার) বিদেশীদের বলি- এটা মেশিন দিয়ে তৈরি করা হয়না। আমাদের দেশের নারীরা এসব তাদের হাতে তৈরি করে থাকেন।
তিনি আরো বলেন, ২০০১ সালে প্রকৃতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি (এমসিসি) কর্তৃক শুরু করা আটটি কর্মসংস্থান প্রকল্পের দায়িত্ব গ্রহণ করে। সেই প্রাথমিক সময়ে (এমসিসি)-র পরিচালকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন- শাসন ব্যবস্থা, আর্থিক কাঠামো এবং আন্তর্জাতিক ন্যায্য বানিজ্যের মানদন্ড গড়ে তুলতে আমাদের সহায়তা করেন।
আমরা হস্তনির্মিত কাগজ, পাট, সিল্ক এবং প্রাকৃতিক তন্তু উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করি এবং নারী করিগরদের ন্যায্য মজুরি ও মর্যাদা নিশ্চিত করি। প্রকৃতি ধীরে ধীরে একটি স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়াতে সক্ষম হয়।
প্রকৃতি রোর্ড অব ডিরেক্টর সুফিয়া আক্তার রহমান, আবজালুল নেছা চৌধুরী, হাসিনা আক্তার তাদের বক্তব্যে বলেন, আমরা ব্র্যান্ডিং শক্তিশালী করি, নিজস্ব পরিচিতি ও প্যাকেজিং তৈরি করি এবং ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ার ক্রেতাদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক গড়ে তুলি। রিসাইকেল করা শাড়ি, বর্জ, পাট ও কচুরিপানা দিয়ে তৈরি পরিবেশবান্ধব পণ্য আমাদের স্বাক্ষর হয়ে ওঠে। ২০১৫ সালে কচুরিপানা দিয়ে তৈরি একটি অলঙ্কারের জন্য আমরা গর্বের সঙ্গে (ডব্লিউএফটিও) মোহাম্মদ ইসলাম ডিজাইন পুরস্কার অর্জন করি। রপ্তানি বৃদ্ধি পায়, কারিগরদের আয় বাড়ে এবং পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ও জীবনমান উন্নত করতে সক্ষম হয়। ব্লক প্রিন্টিং বাঁশের কারুশিল্প ও ক্রোশে খেলনা তৈরির প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আমাদের পণ্যে নানান বৈচিত্র বাড়ায়। আমরা টেরাকোটা, ফ্যাশন ডিজাইন এবং আধুনিক পরিবেশবান্ধব কারুশিল্পে বৈচিত্র এনেছি। আগামী দিনে প্রকৃতি আরও গভীর ক্ষমতায়ন, নবপ্রবর্তন, এবং টেকসই উন্নয়নের পথে এগুতে চায়। নতুন প্রজন্মের নারী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে চায়। আশপাশ ও বাগানের ফেলে দেওয়া লতাপাতা, আগাছা দিয়ে তৈরি করা তৈজসপত্র হতে পারে ঘরের অনেক মূল্যবান সম্পদ।
তারা আরো বলেন, ২০৫০ সালের মধ্যে হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান প্রকৃতি একটি ন্যায্য বানিজ্যের আলোকবর্তিকা হয়ে উঠতে চায়। বিশ্বকে দেখাতে যে নৈতিক ব্যবসা সফল হতে পারে এবং গ্রামীণ বাংলাদেশে জীবন পরিবর্তন করতে পারে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট: “প্রকৃতি ২০৫০ নারী ক্ষতায়ন, পৃথিবীর টেকসই উন্নয়ন।”
আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিখন বণিক বলেন, প্রকৃতি নামে এই প্রতিষ্ঠানটি বরিশাল জেলার গর্ব। আমার কাছে ও ভালো লেগেছে আমি যে উপজেলার ইউএনও সেই উপজেলায় এতো সুন্দর একটি প্রতিষ্ঠান করেছে। প্রতিষ্ঠান রজতজয়ন্তীতে এতো সুন্দর প্রকৃতি দিয়ে মঞ্চ তৈরি করেছে আমাকে মুগ্ধ করেছে। লতাপাতা, বন, তালপাতা, কচুরিপানা ও একটি ফুল গাছ দিয়ে তৈরি সুন্দর মঞ্চ আমি আর কোথাও দেখি নাই। আমি মঞ্চের ছবি তুলে নিয়েছি। আমি যখন যেখানে চাকুরি করবো সেখানে এই মঞ্চের ছবি দেখাবো।
রজতজয়ন্তীতে আরো বক্তব্য রাখেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসার তপন বিশ্বাস, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোসাম্মৎ দৌলাতুন নেছা নাজমা, থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ খান, পল্লীবিদ্যুৎ বরিশাল-২ সমিতির জিএম বিপুল কৃষ্ণ, আগৈলঝাড়া প্রেসক্লাব সভাপতি ডা. মো. মাহাবুবুল ইসলাম, সাংবাদিক এসএম ওমর আলী সানি, প্রকৃতি ডেপুটি ডিরেক্টর সজল কৃষ্ণ দত্ত, মো. সাজ্জাদ হোসেন, ম্যানেজার জগন্নাথ দত্ত, কালিপদ অধিকারী, অঞ্জন কুমার. মিজানুর রহমান, এমসিসি ফেরদৌসি হাওলাদার, সভা পরিচালনা করেন ম্যানেজার পাপড়ি মন্ডল।