প্রেমিকের আশ্বাসে পালিয়ে বিয়ে করতে গিয়ে গণধর্ষনের শিকার প্রেমিকা

এফএনএস (এইচ এম জোবায়ের হোসাইন; ত্রিশাল, ময়মনসিংহ) : | প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:৩৭ পিএম
প্রেমিকের আশ্বাসে পালিয়ে বিয়ে করতে গিয়ে গণধর্ষনের শিকার প্রেমিকা

পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্তে প্রেমিকের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিল এক প্রেমিকা। কিন্তু প্রতারক প্রেমিক বিয়ের নাটক সাজিয়ে নির্জন এলাকায় দুইদিন আটকে রেখে প্রেমিক ও তার ৩/৪ বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে পালাক্রমে পাশবিক নির্যাতন করেছে প্রেমিকাকে। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের চরমাদাখালী গ্রামের গজিয়ার চর এলাকায়। ধর্ষিতার দেয়া বক্তব্যে জানা যায়, উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের চরমাদাখালী গ্রামের বাদশা নামে এক ছেলের সঙ্গে এক অনাথ মেয়ের পরিচয় সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। মেসেঞ্জারে কথোপকোথনে তাদের মধ্যে একসময় প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ৯ মাসের সম্পর্কে ২/৩ বার তাদের দেখা হয় ত্রিশাল বাজারে। সম্প্রতি তাদের মধ্যে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে শুরু হয় কথাবার্তা হয়। অভিভাবকরা রাজি হবে না এই ধারনায় পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। পালিয়ে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে গেল গত মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) পালক মা-বাবার বাড়ি থেকে ৯ হাজার টাকা নিয়ে বের হয় মেয়েটি। প্রেমিক বাদশার কথা ও তার দেয়া ঠিকানা অনুযায়ি মেয়েটি সন্ধ্যার ঠিক আগে বালিপাড়া ইউনিয়নের ধলা বাজারে পৌছে। ধলা বাজারের পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপাড়ে চরমাদাখালী গ্রামে অপেক্ষায় ছিল প্রতারক প্রেমিক বাদশা। ফোনে যোগাযোগ করতে করতেই নদী পার হয় মেয়েটি। ততক্ষণে দিনের আলো নিভে অন্ধকার নেমে আসে। অপেক্ষায় থাকা প্রেমিক বাদশা মেয়েটিকে নিয়ে চরমাদাখালী গ্রামের দিকে হাঁটতে শুরু করে। সরল বিশ্বাসে মেয়েটির অন্ধকারে হেঁটে চলা পথ ছিল অজানা অচেনা গন্তব্যের দিকে।মেয়েটিকে তার প্রেমিক বাদশা নিয়ে যায় চরাঞ্চলের গজিয়ার চর এলাকার একটি নির্জন বাড়িতে। সেখানে আহাদ ও ফরিদ নামে আরও দুজন বন্ধু ছিল। এরপর অপেক্ষায় থাকা হায়েনার দল ঝাঁপিয়ে পড়ে মেয়েটির ওপর। তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় মোবাইল ফোন ও বাড়ি থেকে বিয়ের খরচের জন্য সঙ্গে নিয়ে আসা ৯ হাজার টাকা। চিৎকার দিতে চাইলেই দেয়া হয় প্রাণনাশের হুমকি। এরপর শুরু হয় পালাক্রমে ধর্ষণ যা চলে রাতভর। আবারও বুধবার দিনের বেলা থেকে সারারাত ওই মেয়ের ওপর চলে পৈচাশিক নিষ্ঠুর বর্বরতা। বৃহস্পতিবার সকালে নানা হুমকি-দামকি দিয়ে তাকে ছেড়ে দেয় ধর্ষকরা। পালক মা-বাবার কাছে যাওয়ার মুখ তার ছিল না। তাই নরপিচাশদের পাশবিক অত্যাচারে ব্যথা, যন্ত্রনা ও ক্লান্তিময় শরীর নিয়ে উঠেন এক আত্মীয়ের বাড়িতে। তাকে খুলে বলেন সবকিছু। ওই আত্মীয় মেয়েটির সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিষয়টি জানাতে এবং প্রতিকার পাইয়ে দিতে খবর দেন স্থানীয় এক গনমাধ্যমকর্মীকে। ইকবাল নামে ওই গনমাধ্যমকর্মী মেয়েটিকে প্রথমে নিয়ে আসেন ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে তাকে দেয়া হয় ব্যথা নিরাময়সহ প্রাথমিক চিকিৎসা। পরে তাকে রেফার্ড করা হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ সার্ভিসে। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান স্থানীয় সাংবাদিকরা। সন্ধ্যার পর মেয়েটি ত্রিশাল থানায় আসেন ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করতে।উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইমার্জেন্সি বিভাগের মেডিকেল অফিসার রাশেদ আহমেদ জানান, মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট মনিরা মেয়েটির শরীরের বিভিন্নস্থানে লালচে স্পট দেখতে পেয়েছে। পাশবিকতার কারণে শরীরে খুবই ব্যথা অনুভব করায়, ব্যথা নিরাময়সহ প্রাথমিক চিকিৎসাপত্র দিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ সার্ভিসে রেফার্ড করা হয়েছে। ত্রিশাল থানার ওসি তদন্ত গোলাম মোস্তফা রুবেল জানান, মেয়েটি অভিযোগ করতে এসেছে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীণ।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে