সপ্তাহ পেরোলেও নিত্যপণ্যে স্বস্তি নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:৫৮ পিএম
সপ্তাহ পেরোলেও নিত্যপণ্যে স্বস্তি নেই

সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্যের দামে বড় কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। কিছু পণ্যে সামান্য কমতির ইঙ্গিত মিললেও শীতের ভরা মৌসুমেও সবজি, মাছ ও মাংসের বাজারে স্বস্তি ফিরেনি। বিশেষ করে পুরোনো পেঁয়াজের দামে অস্থিরতা এখনো কাটেনি, যা ভোগাচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) রামপুরা, খিলগাঁও তালতলা, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নতুন পেঁয়াজ ও আলুর দামে কিছুটা কমতি এলেও বেশিরভাগ সবজি এখনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সরবরাহ থাকলেও দামের চাপ কমেনি।

বিক্রেতারা জানান, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ এখনো সীমিত। ফলে পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেশি থাকছে। পুরোনো পেঁয়াজ কিনতে এখনো কেজিপ্রতি গুনতে হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে নতুন পেঁয়াজের দাম সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে প্রায় ১০ টাকা কমেছে। ঢাকার বাজারে নতুন পেঁয়াজ ৮০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

খিলগাঁও তালতলা বাজারে নতুন পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও রামপুরার কয়েকটি দোকানে একই পেঁয়াজের দাম ১২০ টাকা পর্যন্ত দেখা গেছে। বিক্রেতা ফরিদ হোসেন বলেন, “নতুন পেঁয়াজের মান ও আকারের ভিন্নতার কারণে দামে পার্থক্য থাকে। সরবরাহ বাড়লে দাম আরও কমবে।”

আলুর বাজারে তুলনামূলক স্বস্তির চিত্র দেখা গেছে। নতুন আলু গত সপ্তাহে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। পুরোনো আলুর দাম আগের মতোই ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি।

সবজির বাজারে কিছু পণ্যের দাম কমলেও সামগ্রিকভাবে চাপ রয়ে গেছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি ৩০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের কেজি ৫০ থেকে ৮০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, আর রঙিন শিম বাজারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। টমেটো, গাজর ও বরবটির কেজি অনেক জায়গায় ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে নামছে না।

মাছ ও মাংসের বাজারেও স্বস্তি নেই। মাঝারি আকারের রুই মাছ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, মৃগেল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, আর শিং মাছের দাম উঠেছে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৮০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে নিম্নমুখী রয়েছে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির বাজার। ডিম ডজনপ্রতি ১১০ থেকে ১২০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিম ও মুরগির বিক্রেতারা জানান, দাম কম থাকায় খামারিরা উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছেন।

যাত্রাবাড়ী বাজারে কেনাকাটা করতে আসা গৃহিণী সেলিনা বেগম বলেন, “শীতের সবজি থাকলেও বাজারে গেলে হিসাব মেলানো কঠিন। সরবরাহ থাকলে দাম কমার কথা, কিন্তু সেটা হচ্ছে না।” একই বাজারে ক্রেতা রবিউল ইসলাম জানান, “আয় বাড়ছে না, কিন্তু বাজার খরচ নিয়মিত বাড়ছে। সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে।”

অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আড়ত থেকেই পণ্য বেশি দামে কিনতে হওয়ায় তাদেরও বিক্রি করতে হচ্ছে চড়া দামে। পরিবহন ও শ্রমিক খরচ বৃদ্ধিও দামের ওপর প্রভাব ফেলছে বলে জানান তারা।

সবমিলিয়ে শীত এলেও কাঁচাবাজারে দামের উত্তাপ কমেনি। ক্রেতাদের প্রত্যাশা, বাজারে কার্যকর নজরদারি বাড়লে নিত্যপণ্যের দামে কিছুটা হলেও স্থিতিশীলতা ফিরবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে