বিজয়ের চারদিন পর চাটমোহর হানাদার মুক্ত হয়

এফএনএস (হেলালুর রহমান জুয়েল; চাটমোহর, পাবনা) : | প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৩:৪৩ পিএম
বিজয়ের চারদিন পর চাটমোহর হানাদার মুক্ত হয়

আগামীকাল ২০ ডিসেম্বর। চাটমোহর হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এইদিনে পাবনার সবচেয়ে প্রাচীন ও হিন্দু বধিষ্ণু জনপদ চাটমোহর পাকিস্তানী হানাদারদের দখল মুক্ত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধরা। অবশ্য তার আগেই ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয় প্রায় সারাদেশে। কিন্তু চাটমোহরে তখনো হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা। বিজয়ের চারদিন পর হানাদারমুক্ত হয় চাটমোহর। 

পাবনার চাটমোহর হানাদার মুক্ত হবার দিনটি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন,৭১’ সালের এপ্রিল মাসে হানাদাররা দু’দফায় পাবনায় প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার প্রবল প্রতিরোধের মুখে। মে মাসে ফের তারা আধুনিক অস্ত্র সর্জ্জিত হয়ে পাবনা দখল করে নেয় নগরবাড়ী দিয়ে ঢুকে। এরপর তারা চাটমোহর দখল করে নেয় ১৩ মে। অবশ্য তার আগেই ২৪ এপ্রিল পাবনা থেকে এসে হানাদাররা প্রাচীন জনপদটি আগুন দিয়ে ঝলসে দেয়। ব্যাংক লুট করে নেয়। ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ খাঁন ও ক্যশিয়ার শামসুল ইসলাম সহ দু’জন গার্ডকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর হানাদাররা  হিন্দু সমপ্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি রঘুনাথ কুন্ড,অশ্বিনী কুন্ডু,যতীন কুন্ডু ও ঝরু ঠাকুরকে গুলি করে হত্যা করে তাদের বাড়িতে গিয়ে। এরপর গঠিত হয় শান্তি কমিটি। সংখ্যালঘুদের উপর চলতে থাকে জুলুম-অত্যাচার,নারী নিগ্রহ। প্রথমে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হন ফয়েজ খান। পরে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হন নূরুজ্জামান মিয়া। তার নেতৃত্বে রাজাকারা চালাতে থাকে অত্যাচার-নির্যাতন,লুটপাট। এ ভাবেই সাড়ে সাত মাস চাটমোহর পাক হানাদার ও তাদের দোসরদের কবলে থাকে। 

ডিসেম্বর মাসে মুক্তিযোদ্ধারা ছোট ছোট আক্রমনের মধ্যমে গ্রামাঞ্চল দিয়ে চাটমোহর শহরকে ঘিরে ফেলেন। ১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা প্রথম থানা আক্রমন করেন। কমান্ডার মোজাম্মেল হক ময়েজ,সহকারী কমান্ডার এসএম মোজাহারুল হক, ইদ্রিস আলী চঞ্চল,আমজাদ হোসেন লাল এর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের সাড়াশি আক্রমনের মুখে হানাদাররা থানায় আটকা পড়ে। ১৫ ডিসেম্বর রাতে এক আক্রমনের মুখে দুর্ধষ পাকীসেনা শের আফগানসহ বেশ ক’জন মিলিশিয়া হানাদার নিহত হয়। পরদিন সকালে হানাদাররা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা রামনগর গ্রামের দুই সহোদর মোসলেম ও তালেবকে প্রকাশ্যে দিনের বেলা বর্তমান নির্মানাধীন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের পেছনে বিশাল বটগাছের নীচে নদীর কিনারে গুলি করে হত্যা করে। ১৬ ডিসেম্বর অবস্থা বেগতিক বুঝে হানাদারা থানায় সাদা পতাকা উড়িয়ে ফ্লাগ মিটিং আহ্বান জানায়। এ অবস্থায় দুইদিন আক্রমন বন্ধ থাকে। ১৮ ডিসেম্বর হানাদারদের আহ্বানে সারা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডাররা থানায় প্রবেশ করে আলোচনায় বসে। হানাদাররা মুক্তিবাহিনী নয়,মিত্রবাহিনীর কাছে আত্নসমর্পনের শর্ত দেয়। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডাররা আক্রমন বন্ধ রেখে ২০ ডিসেম্বর পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রফিকুল ইসলাম বকুলকে মিত্রবাহিনীর পোষাক পরিয়ে নকল মিত্রবাহিনী সাজিয়ে চাটমোহরে নিয়ে আসেন। এদিন বেলা ২ টায় তার কাছেই হানাদার বাহিনী আত্নসমর্পন করে। এ ভাবেই বিজয় দিবসের ৪ দিন পরে ২০ ডিসেম্বর চাটমোহর হানাদার মুক্ত হয়। 

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে