জাতীয় সংসদের নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনে প্রকাশ্য দিবালোকে আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করা হলেও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকার জনমনে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে। এলাকায় মোড়ে মোড়ে এনিয়ে চলছে টেবিল ট্যক। প্রশাসনের নমনীয়তায় এখানে সুষ্ঠু ভোট হবে কিনা, বা পক্ষপাতিত্ব করা হবে কিনা, প্রার্থীরা লেভেল প্লেইং ফিল্ড পাবেন কিনা তা নিয়ে শংসয় প্রকাশ করেছেন তারা।
আলোচনা শুরু হয় গত ১৪ ডিসেম্বর দুপুরে মহাদেবপুর ধানের শীষ সমর্থক গোষ্ঠীর ব্যানারে ৯০টি ওয়ার্ড কমিটির নেতাকর্মী নিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থ্যতা কামনায় দোওয়া মাহফিল নিয়ে। সমালোচকরা বলছেন, পাঁচ হাজারের বেশী সমর্থকের উপস্থিতিতে দোওয়া মাহফিলের আয়োজন করা হলেও এটি পরিণত হয় নির্বাচনী জনসভায়, যা নির্বাচনী আচরণ বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আয়োজকরা জেনে শুনেই দোওয়া মাহফিলের নামে জনসভার আয়োজন করে। তবে আয়োজকরা তা মানতে নারাজ। আর প্রশাসন বলছেন আপাতত: নমনীয় ভাব দেখাচ্ছেন তারা।
এদিন মহাদেবপুর হাইস্কুল মাঠে আয়োজিত সমাবেশে ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী ফজলে হুদা বাবুল নিজে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যে তিনি প্রকাশ্যে ধানের শীষের প্রচার চালান। এছাড়া নওগাঁ জেলা বিএনপির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নুসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তারাও ধানের শীষে ভোট দেয়ার আর প্রচারে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান।
সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে কয়েকশ’ মোটরসাইকেল, অটোচার্জার, ভুটভুটি, ট্রাক্টর, মিনি ট্রাক ও বিভিন্ন যানবাহনের বহর নিয়ে সমর্থকেরা শোডাউন দিয়ে ধানের শীষের শ্লোগান দিতে দিতে সমাবেশস্থলে আসেন। সমাবেশের শুরুতে মাইকে হিন্দি গান বাজানো হয়। এদিন ছিল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এমন দিনে হিন্দি গান বাজানোয় বিরক্ত হন সকলে। সমাবেশস্থলের পাশেই চারটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল। এগুলোতে দুপুর ২টা পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। পুরো পরীক্ষার সময়ই বাজানো হয় মাইক।
গত ১০ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় ‘সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০২৫’ প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করেছে। বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় তা প্রকাশ করা হয়। এই বিধিমালার নির্বাচন-পূর্ব সময়ে অনুসরণীয় বিধানাবলীর ১৮ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, “কোন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তৎকর্তৃক মনোনীত প্রাথী, বা সতন্ত্র প্রার্থী, কিংবা তাহাদের অন্য কোন ব্যক্তি ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ সময়ের পূর্বে কোন প্রকার নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারবেন না এবং ভোটগ্রহণ শুরু হবার ৪৮ ঘন্টা পূর্বে নির্বাচনী প্রচারণা সমাপ্ত করিবেন।” এছাড়া ৯ (ক) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, “নির্বাচনী প্রচারণায় কোন বাস, ট্রাক, নৌযান, মোটরসাইকেল কিংবা অন্য কোন যান্ত্রিক বাহন সহকারে কোন মিছিল, জনসভা, কিংবা কোনরুপ সোডাউন করিতে পারিবেন না।” ১৭ (১) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘‘কোন প্রার্থী বা তাহার পক্ষে কোন ব্যক্তি কোন নির্বাচনী এলাকায় একইসঙ্গে তিনটির অধিক মাইক্রোফোন বা লাউড স্পিকার ব্যবহার করিতে পারিবেন না।” ওই সমাবেশে উপরের তিনটি ধারাই লঙ্ঘন করা হয়েছে।
বিধিমালার ২৭ (ক) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘‘কোন প্রার্থী বা তাহার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি নির্বাচন-পূর্ব সময়ে এই বিধিমালার কোন বিধান লঙ্ঘন করিলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ছয় মাসের কারাদন্ডে অথবা অনধিক এক লক্ষ ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।” কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী কোনই ব্যবস্থা নেননি। সংক্ষুব্ধ কেউ লিখিত অভিযোগ না দিলেও বিধিমালার ২৬(৩) ধারা মতে “কোন তথ্যের ভিত্তিতে বা অন্য কোনভাবে কমিশনের নিকট নির্বাচন-পূর্ব সময়ে কোন অনিয়ম দৃষ্টিগোচর হইলে (ক) ধারায় তদন্ত করার জন্য অথবা (খ) ধারায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়ার বিধান থাকলেও তা করা হয়নি।
জানতে চাইলে, এই আসনে নির্বাচনী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে নিয়োজিত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও মহাদেবপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) জান্নাতুন নাঈম বিনতে আজিজ বলেন যে, বিষয়টি জানার পর তিনি সমাবেশস্থলে গিয়ে আয়োজকদের হিন্দি গান বাজাতে নিষেধ করেছেন। অন্যান্য বিষয়ে মৌখিক সতর্ক করেছেন। এই আসনের সহকারি রিটার্নিং অফিসার ও মহাদেবপুর ইউএনও মো: আরিফুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, ব্যানারে দোওয়া মাহফিল থাকায় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
আয়োজক ধানের শীষ সমর্থক গোষ্ঠীর আহ্বায়ক বিএনপি নেতা শহীদুল ইসলাম সাগর দাবি করেন যে, এটি কোন নির্বাচনী প্রচার নয়, বরং স্রেফ দোওয়া মাহফিল। জুলাইযোদ্ধা সোহেল রানা বলেন, ১১ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণা করা হয়, ভোটগ্রহণ ১২ ফেব্রুয়ারি। তাই ২২ জানুয়ারীর আগে কোন আনুষ্ঠানিক প্রচার করা যায়না। বিধি লঙ্ঘনের সাজা না হওয়ায় এই প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু ভোট হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।