মাঝে মাঝেই উপোস থাকতে হয়, পেশা ছাড়ছেন মুচিরা

এফএনএস (সৌরভ অধিকারী শুভ; শেরপুর, বগুড়া) : | প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০১:০৪ পিএম
মাঝে মাঝেই উপোস থাকতে হয়, পেশা ছাড়ছেন মুচিরা

একসময় পথেঘাটে ছেঁড়া জুতা সেলাই কিংবা কালি করে যারা সামান্য আয়ে জীবিকা নির্বাহ করত, সেই মুচি সম্প্রদায় এখন বাস্তবতার মুখোমুখি। আধুনিক জুতার বাজার ও মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তনের প্রভাবে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মুচি সম্প্রদায়ের লোকজনের দিনাতিপাত হচ্ছে তীব্র অভাব-অনটনের মধ্যে। এ পেশা আজ বিলুপ্তির পথে আর এর সঙ্গে জড়িত মানুষগুলো হারিয়ে ফেলছে তাদের রুজির একমাত্র অবলম্বন। বগুড়া শেরপুরের রেজিষ্ট্রি অফিস মোরে ২৫ বছর ধরে একটি ছাতার নিচে বসে জুতা সেলাই আর পলিশের কাজ করে রনজিৎ মুচি। তার কাছে জানা যায়, বছর দশেক আগেও ছেঁড়া বা পুরনো জুতা মেরামত, সেলাই করা কিংবা পলিশ করার যথেষ্ট কাজ পাওয়া যেত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। মেরামত নয়, সরাসরি বাতিল। বর্তমানে মানুষ জুতা ছেঁড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে না।

সামান্য পুরোনো বা একটু ত্রুটি দেখা দিলেই তা ফেলে দিয়ে নতুন জুতা কিনে নেয়। ফলে মুচিদের সেলাই বা পিন মারার কাজ বহুলাংশে কমে গেছে। কালির করার প্রয়োজনও তেমন একটা হয় না। বাজারে এখন প্লাস্টিক, রেক্সিন বা বিভিন্ন সিনথেটিক উপাদানের তৈরি নানান ধরনের জুতার সমাহার। এই জুতাগুলোতে কালির প্রয়োজন হয় না। ফলে জুতা পলিশ করে আয় করার সুযোগও বন্ধ। একসময় মোটরগাড়ির পুরোনো টায়ার কেটে যে মজবুত জুতা তৈরি হতো, তা মুচিদের আয়ের একটি বড় উৎস ছিল। বর্তমানে সেই জুতা বাজারে আর চলে না, যা তাদের আয়ে বড় ধাক্কা দিয়েছে। মুচি সম্প্রদায়ের অনেকে জানায়, এখন সারাদিনে কাজ করে ২ থেকে ৩ শ টাকা আয় করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এই সামান্য আয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুবেলা খাবার জোগাড় করাই কষ্টসাধ্য। ?বাপ-দাদার এই ঐতিহ্যবাহী পেশায় কাজ করে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ায় মুচি সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ মানুষই চায় না তাদের সন্তানরা এই কাজ শিখুক। অনেকেই ইতোমধ্যে এই পেশা ছেড়ে রিকশা চালানো বা অন্য কোনো ছোটখাটো কাজ শুরু করেছে। কিন্তু শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে বিকল্প কর্মসংস্থান খুঁজে পাওয়াও তাদের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। বঞ্চনার শিকার এই জনগোষ্ঠী সমাজে এখনো পিছিয়ে থাকা একটি অংশ। ?বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মুচি সম্প্রদায়ের মানুষের এই করুণ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছে তারা।

সমাজের সচেতন মহলের ধারণা, সরকারিভাবে দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে নতুন জুতা তৈরির মাধ্যমে এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব বলে আশা করা যায়।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে