সীতাকুণ্ডে কাজী সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে দলকে টুকরো টুকরো করার অভিযোগ

এফএনএস (জহিরুল ইসলাম; সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম) : | প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০১:০৬ পিএম
সীতাকুণ্ডে কাজী সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে দলকে টুকরো টুকরো করার অভিযোগ

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড-পাহাড়তলী-আকবরশাহ আংশিক) আসনে ধানের শীষের সম্ভাব্য প্রার্থী কাজী সালাউদ্দিন ক্রমেই প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠেছেন বলে অভিযোগ করছেন বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তার নির্দেশ না শোনায় একের পর এক বহিস্কার, পদ স্থগিত, কারণ দর্শানো, কমিটি ভেঙে দেওয়ার মতো শাস্তিও পেতে হচ্ছে নেতাকর্মীদের। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও রোষানলে পড়তে হচ্ছে অনেককে। সর্বশেষ তার ইশারায় উপজেলা যুবদলের একতরফা কমিটি গঠন করে যুবদলকেও বিভক্ত করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন নেতাকর্মীরা। ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা ওই কমিটিকে পকেট কমিটি আখ্যা দিয়ে কাজী সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন হাইকমান্ডের কাছে। 

জানা যায়, এর আগে কাজী সালাউদ্দিনের পরিকল্পনায় সীতাকুণ্ড পৌরসভা ছাত্রদলের কমিটি ভেঙে দেন। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৯ টি ওয়ার্ডের কয়েক হাজার নেতাকর্মী। 

সর্বশেষ কাজী সালাউদ্দিনের  অনুসারীদের নিয়ে কেন্দ্র থেকে গত ১৬ ডিসেম্বর উপজেলা ও পৌরসভা যুবদলের কমিটি ঘোষণা হয়। এতে কাজী সেলিমকে সভাপতি ও  আনোয়ার হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক ও সালাহ উদ্দিন সিকদারকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। একইভাবে আকবর হোসেনকে সভাপতি ও মুহিদুল আবিরকে সাধারণ সম্পাদক এবং জামাল উদ্দিন রাজুকে সিনিয়র সহ-সভাপতি করে সীতাকুণ্ড পৌরসভা যুবদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। 

যুবদলের সভাপতি পদ পেয়েই কাজী সেলিম উদ্দিন পরের দিন ১৭ ডিসেম্বর উপজেলার সব ইউনিয়নের যুবদলের কমিটি ভেঙে দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আবারও চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েই কাজী সালাউদ্দিন আসলাম চৌধুরীর সমর্থকদের দল থেকে মাইনাস করার মিশনে নেমেছেন।  ঠুনকো অভিযোগ তুলে বহিষ্কার, পদ স্থগিত, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি ভেঙে দেয়াসহ নানা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছেন। বাদ যাচ্ছে না তার চেয়েও বয়োজ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদও। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের গুলোকে ভেঙে টুকরো টুকর করছেন। এতে করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কাজে সালাউদ্দিন এর উপরে চরমভাবে ক্ষুব্ধ।

এদিকে সম্প্রতি উপজেলা যুবদলের সব ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি আব্দুল মুনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন সেলিম উদ্দিন ও আনোয়ার হোসেনকে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। 

দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী সালাউদ্দিন বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার পরপর কেন্দ্রে ভুল তথ্য দিয়ে শীর্ষ ছয় জন নেতাকে বহিস্কার করান। এরা হলেন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডাক্তার কমল কদর, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোঃ মোরসালিন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আলাউদ্দিন মনি, সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বাবর, উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কোরবান আলী সাহেদ, পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মামুন রেজা চৌধুরীকেও বহিস্কার করা হয় সালাউদ্দিনের নির্দেশে। শুধু তাই নয় ইতিপূর্বেও তার পরিকল্পনায় যুবদলের আহ্বায়ক ফজলুল করিম চৌধুরীকে মিথ্যে অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। একইভাবে ৯ টি ইউনিয়নে সুপার ফাইভের  কমিটি করে তৃণমূলের কয়েকশত ত্যাগী নেতাদের কমিটি থেকে বাদ দিয়েছেন। যারা দীর্ঘ বছর যাবত স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে শিকার হয়েছেন। তাছাড়াও তারা প্রত্যেকে বিএনপি'র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। 

বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, কাজী সালাউদ্দিনের এই রোষানল, প্রতিহিংসা আর প্রতিশোধের এই নোংরা ধারা অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনে বড় ধরনের অস্থিরতা ও সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে।

দলীয় সূত্র ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ধানের শীষের সম্ভাব্য প্রার্থী কাজী সালাউদ্দিনের নির্দেশে সীতাকুণ্ড উপজেলা যুবদলের নয়টি ইউনিয়ন এবং ৮১টি ওয়ার্ড কমিটি একযোগে ভেঙে দেওয়া হয়েছে গত ১৭ ডিসেম্বর। ১৬ ডিসেম্বর নব গঠিত কমিটির সভাপতি হয়েই কাজী সালাউদ্দীনের নির্দেশে এমন স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত নেন উপজেলা ছাত্রদলের  সাবেক সভাপতি কাজী সেলিম উদ্দিন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান, গত ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম-৪ আসনে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ধানের শীষের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কাজী সালাউদ্দিনের নাম ঘোষণার পর থেকে কাজী সালাউদ্দিন বিএনপিতে তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রাসী হয়ে ওঠেছেন। এজন্য তিনি তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ইয়াবা ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টির ঢাকা কলাবাগান শাখার সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসেন সহ আওয়ামী লীগের সুবিধাবাদীদের দলে অনুপ্রবেশ করিয়ে তার গ্রুপ ভারী করার চেষ্টা করছেন। অপরদিকে কেন্দ্রকে ভুল বুঝিয়ে আসলাম চৌধুরীর অনুগতদের বহিষ্কার, পদ স্থগিত,  কমিটি ভেঙে দেওয়াকে অস্ত্র হিসেবে বেচে নিয়েছেন কাজী সালাউদ্দিন। বিএনপি'র দুর্গ হিসেবে পরিচিত আসলাম চৌধুরীর সাজানো মাঠকে অনেকটা টুকরো টুকরো করছেন কাজী সালাউদ্দিন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের মধ্যে ঐক্যের বদলে তিনি নিজেই ভাঙন সৃষ্টি করছেন। যা ভবিষ্যতের সীতাকুণ্ড বিএনপিকেও প্রতিপক্ষ জামায়াতের ইসলামীর কাছে  দুর্বল করে তুলবে। 

তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি, ধানের শীষের সম্ভাব্য প্রার্থীর নিয়ন্ত্রণে না থাকায় পরিকল্পিতভাবে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাদের অভিযোগ, নিজের পছন্দের লোকদের দিয়ে সংগঠন সাজাতে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রামে জড়িত ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দেওয়া হয়েছে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক  শাহাবুদ্দিন আমার দেশকে বলেন, কাজী সালাউদ্দিনের  নির্দেশে অনেকটা স্বৈরাচারী কায়দায় জেল-জুলুম সহ্য করে রাজপথে থাকা ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করে একতরফাভাবে কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এটি তার প্রতিশোধপরায়ণ রাজনীতিরই বহিঃপ্রকাশ।

সীতাকুণ্ড পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব ছালে আহাম্মদ ছলু আমার দেশকে বলেন, পৌরসভা ছাত্রদলের কমিটি ভেঙে দেওয়ার কোন কারণ ছিল না। জাতীয় নির্বাচনের আগে এভাবে কমিটি ভাঙা ও বহিষ্কারের রাজনীতি দলীয় ঐক্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এতে বিএনপি দুর্বল হয়ে পড়বে।

উল্লেখ্য, গত ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয়ভাবে কাজী সালাউদ্দিনকে ধানের শীষের সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই তার মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবিতে সীতাকুণ্ডে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, মশাল মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ ধারাবাহিক কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। সর্বশেষ প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মানববন্ধন ও ৫৪ কিলোমিটার এলাকা জু ওরড়ে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা অবিলম্বে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ, নিরপেক্ষ তদন্ত এবং তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে