মহান মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আবদুল করিম খন্দকার, এ কে খন্দকার বীর উত্তমকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ বিদায় জানানো হয়েছে। রাজধানীর বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারে অনুষ্ঠিত জানাজায় অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারের প্যারেড গ্রাউন্ডে এ কে খন্দকারের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর ফিউনারেল প্যারেড ও গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। কফিন বহনকারীরা স্লো মার্চ করে কফিন মঞ্চে নিয়ে আসেন।
জানাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা ছাড়াও সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জানাজার আগে মরহুমের ছেলে জাফরুল করিম খন্দকার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। পরে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। এরপর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথকভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পর্যায়ক্রমে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। জানাজা শেষে বিমান বাহিনীর একটি ফ্লাই পাস্টের মাধ্যমে এ কে খন্দকারের প্রতি সম্মান জানানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধের এই বীর সেনানী শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। আইএসপিআর জানায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি মারা যান।
এ কে খন্দকার ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কৌশলগত সিদ্ধান্ত ও সাংগঠনিক দক্ষতার মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগ্রামকে সুসংহত করতে তাঁর অবদান ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।
স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশের প্রথম বিমান বাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে কূটনীতিক হিসেবেও তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে তিনি রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন এবং এইচ এম এরশাদের সময়ে পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন। পরে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১১ সালে তাঁকে স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়।