আগৈলঝাড়ায় ২৪৫ বছরের প্রাচীণ গ্রাম বাংলার মারবেল খেলা

এফএনএস (এস এম ওমর আলী সানি; আগৈলঝাড়া, বরিশাল) : | প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৫:১৫ পিএম
আগৈলঝাড়ায় ২৪৫ বছরের প্রাচীণ গ্রাম বাংলার মারবেল খেলা

গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধরেরাখতে ২৪৫ বছরের প্রাচীণ কাল  থেকে মারবেল খেলার মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিগতায় বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দের আঁক গ্রামে প্রতিবছরের ন্যায় (আজ) মঙ্গলবার পৌষ সংক্রান্তিতে এ বছরও মারবেল খেলার মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলায় আসপার্সের উপজেলা এবং দেশের বিভিন্ন জেলার থেকে আসা শত শত তরুন-তরুনী, যুবগ-যুবতী ও বৃদ্ধাসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ ভিন ্নভিন্ন দলে দলেএই খেলায় অংশনেয়। রাস্তার ওপর, বাড়ির আঙিনা, অনাবাদী জমি, পুকুরপাড়, বাগানসহ সর্বত্রই মারবেল খেলার আসর বসেছে। মেলার মূল আকষন মারবেল খেলা। রামানন্দের আঁক গ্রাম যেনো এক মহোৎসবে পরিনতহয়। সকলে আনন্দে বেতে উঠেছে। তরুন-তরুনিরা এই দিনটি জন্য সার বছর অপেক্ষায় থাবে মারবেল খেলারজন্য। রামানন্দের আঁক গ্রামে বিশ্বাস বাড়ির পাশের জমিতে বসেছে বাঁশ-বেত শিল্প সামগ্রী, মনিহারী, খেলনা, মিষ্টি, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানীরা।

মেলা কমিটির সভাপতি নির্মল মন্ডল বলেন, রামানন্দের আঁক গ্রামে ২শত ৪৫ বছর পূর্বে সোনাই চাঁদ আউলিয়ার একটি নিমগাছের গোড়ায় পৌষ সংক্রান্তিতে শিবের আরাধনা ও পূজা-অর্চনা শুরু করে। সেই দিন থেকে প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে এখানে মারবেল খেলা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তারই ধারবাহিগতায় ২শত ৪৫ বছর ধরে গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধরেরাখতেএবছরও পৌষ সংক্রান্তিতে মঙ্গলবার ১৪ জনুয়ারি মারবেল খেলা ও মেলা অনুষ্ঠিতহয়। এই মেলায় আগৈলঝাড়া উপজেলা পার্শ্ববর্তী কোটালীপাড়া, উজিরপুর, ডাসার, মাদারীপুর, কালকিনি, গৌরনদী, বানারীপাড়া, বাকেরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আগত বিভিন্ন বয়সের হাজারো নারী-পুরুষ দলে দলে মারবেল খেলছে। অনেকেই মারবেল খেলার জন্য এই দিনটির অপেক্ষায় থাকে। এছাড়াও সোয়ামণ চালের গুড়ার সাথে সোয়ামণ আঁখের গুড়, ৫০ জোড়া নারকেল ও প্রয়োজনীয় কলাসহ অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে নবান্ন তৈরী করে মেলায় আগত দর্শণার্থীদের  মাঝে বিতরণ করা হয়। 

মারবেল খেলার মূল রহস্য সম্পর্কে স্থানীয় মনিমোহন বালা(৭৬) ও রিপন বিশ্বাস(৪৫) জানান, আমাদের পূর্বপুরুষরা এ খেলার মাধ্যমে মেলার প্রচলন করেছিল। যা আজও অব্যাহত আছে। তাদের উত্তরসূরী হিসেবে আমরা সেই প্রাচীণ ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এদিনটিকে ঘিরে রামানন্দের আঁক গ্রামে আনন্দ বিরাজ করছে। স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের মেয়ে-জামাইসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের এ মার্বেল মেলায় আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছে। 

নবাবগঞ্জ থেকে মারবেল খেলার জন্য এসেছেন সুকদেব বিশ্বাস, বাগধা গ্রাম থেকে সুচিত্রা বিশ্বাস, ঢাকা থেকে শিখা বিশ্বাস পরিবারের সকলকে নিয়ে মারবেল খেলা ও মেলায় এসেছে। তারা বলেন মেলা এসে মারবেল খেলতে পেরে ভাল লাগছে। দিনটা খুব ইনজয় করছি।

মারবেল বিক্রেতা আগৈলঝাড়ার ত্রিমুখী গ্রামের প্রদীপ বল্লভ বলেন, প্রতিবছর মারবেল বিক্রির জন্য এই দিনের অপেক্ষায় থাকি। বেচা-কিনা অন্য বছরের চেয়ে ভাল হচ্ছে। একশত পিচ মারবেল ২০টাকায় বিক্রি করছি। 

উপজেলার বাকাল গ্রামের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র মিরাজ ফকির ও পশ্চিম রাজিহার গ্রামের ৫ম শ্রেনীর  ছাত্রী ভুমিকা তালুকদার বলেন, সারা বছর টাকা জমিয়েছি মারবেল খেলার জন্য। শিশু থেকে শুরু করে কিশোর, কিশোরী, যুবক-যুবতীরা মেলার প্রধান আকর্ষণ মারবেল খেলায় অংশগ্রহণ করেন। 

এব্যাপারে আগৈলঝাড়া থানা ওসি তদন্ত সুশংকর মল্লিক সাংবাদিকদের জানান, এই মারবেল মেলায় আগত সারধারন লোকজন ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য আমরা এসেছি। মেলায় মারবেল খেলার জন্য অনেকে দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন তাদের জন্য পূর্ব থেকেই ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।