আশাশুনিতে পানি ব্যবস্থাপনা সহজ হওয়ায় কৃষকরা তরমুজ চাষের প্রতি দিনদিন আগ্রহী হয়ে উঠছে। পতিত জমি তরমুজ ও সবজী চাষের আওতায় এনে অধিক মুনাফা পাওয়ায় দিন দিন তরমুজ চাষে এলাকার কৃষকরা ঝুকতে শুরু করেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস "ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন" শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আশাশুনি উপজেলায় মিনি পুকুর খনন কার্যক্রম হাতে নেয়। রবি- ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে এরই আওতায় ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহন করা হয়। বোরো মৌসুমে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে এলাকার পতিত জমিতে তরমুজ, ভুট্টা ও সবজি আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিনি পুকুর খনন কাজ করা হয়। উদ্দেশ্য, ৫ শতক জমির উপর একটি মিনি পুকুর খনন করে পুকুরের পানি সেচ দিয়ে পাশের জমিতে ফসল করা। এভাবে পতিত জমি চাষের আওতায় এনে অধিক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়। এ মৌসুমে ১০ টি পুকুর খননের লক্ষ্যে খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। বামনডাঙ্গা গ্রামের গোবিন্দ লাল সরদার, সুপ্রিয়া মন্ডল, মানবেন্দ্র ঢালী, মাখন লাল ঢালী, অহেদুল সানা, তুলসী রানী মন্ডল, শোভা রানী মন্ডল, শঙ্কর প্রসাদ ঢালী, নিত্যানন্দ কুমার সানা ও জয়ন্ত কুমার ঢালীর জমিতে পুকুর খনন করা হবে। ইতিমধ্যে খনন কাজ শুরু করা হয়েছে।
বড়দল ইউনিয়নের জামালনগর গ্রামের আঃ হাকিম গাজীর ছেলে আফছার গাজী গত মৌসুমে তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছিলেন। এবছরও তিনি স্বউদ্যমে তরমুজ চাষ করছেন। আফছার গাজী গত মৌসুমে ১৬ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেন। সর্ব সাকুল্যে তার খরচ হয়েছিল ৩ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা। তরমুজের সাইজ ও সাদ ছিল খুবই ভাল। বাজারে চাহিদাও ছিল যথেষ্ট। সব মিলে তার তরমুজ বিক্রী হয়েছিল ১২ লক্ষাধিক টাকা। ৮ লক্ষাধিক টাকা লাভ পেয়ে তিনি যেমন উৎফুল্লা ছিলেন, তেমনি তার সফলতা দেখে এলাকার অনেক চাষী তরমুজ চাষে ঝুকেছেন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, ইতিপূর্বে আশাশুনিতে ৪০ টি মিনি পুকুর খনন করা হয়েছে। এসব পুকুরের পানি ব্যবহার করে সাড়ে ১০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হচ্ছে। পানির সমস্যা না থাকায় কৃষকরা নিশ্চিন্তে চাষাবাদ করে চলেছে। তরমুজ চাষীদের সফলতা দেখে এলাকার অনেক ক্ষৃক নিজ উদ্যোগে মিনি পুকুর খনন করেছেন এবং খালের পানি বেধে রেখে তরমুজ আবাদ করছেন।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমুস সাকিব শাওন বলেন, আগে তরমুজ চাষাবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বড়দল ইউনিয়নে ৩০টি মিনি পুকুর খনন করা হয়। মিনি পুকুর প্রযুক্তির মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পরবর্তীতে তরমুজ চাষাবাদে ব্যবহার করে তরমুজ চাষে সফল হয়েছে কৃষকেরা। ফলে দিন দিন বড়দল ইউনিয়নের জনপ্রিয় হচ্ছে মিনি পুকুর ভিত্তিক তরমুজ চাষাবাদ এবং ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে নতুন নতুন পতিত জমিতে সবুজায়ন। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৪৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হবে বলে আমরা আশাবাদি। যা বিগত বছরের তুলনায় ৩০০ হেক্টর বেশি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এস এম এনামুল ইসলাম জানান, পুকুরে পানি সংরক্ষনের মাধ্যমে প্রয়োজনের সময় পানি সেচ দিয়ে তরমুজ, ভুট্টা ও সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ ও সম্পৃক্ত করে সফলতা এসেছে। মিনি পুকুরের পানি শেষ হয়ে আসলে শেষের দিকে বোরিং এর পানি পুকুরে দিয়ে ভরে ২/৩ দিন সংরক্ষণ করে ফসলে সেচ দিলে আইরন ও লবণাক্ততা থাকবেনা। ফলে ভালভাবে পানির প্রয়োজন মিটিয়ে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এলাকায় পুকুরের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা গেলে তরমুজ ও সবজির আবাদ সম্প্রসারিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।