মো. আব্দুর রশিদ বয়স ষাটের মাঝামাঝি। জীবণ যুদ্ধে পরাজিত এক মানুষ। যুবক বয়সে ভিক্ষাবৃত্তিকে ঘৃণা করলেও আজ সেই ভিক্ষাবৃত্তিই তার জীবণ চলার একমাত্র অবলম্বন। জীবণ মানে যার কাছে শুধুই বেদনা। জীবণ যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সন্তান-সন্ততিদের মুখে দু-মুঠো আহার তুলে দেওয়ার জন্য তিনি ভিক্ষাবৃত্তির এই অসম্মানজনক পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। আব্দুর রশিদের বাস নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার পাটিচরা ইউনিয়নের পাটিআমলাই গ্রামে। পরিবার স্ত্রী ও ২মেয়ে সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে ৯ম শ্রেণীতে ও ছোট মেয়ে ৭ম শ্রেণীতে পড়ালেখা করেন।
নিয়তির পরিহাসে আব্দুর রশিদ আজ ভিক্ষুক হলেও তিনি ছিলেন খেটে খাওয়া উদ্যমী একজন শ্রমিক। কাজ করতেন ধামইরহাট উপজেলার একটি কাঠ ফাঁড়াই মিলে। প্রায় ১০বছর আগে মিলে একটি দুর্ঘটনায় মারাত্বক আহত হন এবং ২হাত কেটে ফেলতে হয়। এ সময় মালিকপক্ষ তাকে চিকিৎসার জন্য সার্বিক সহায়তা করেন এবং সে যাত্রায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। সুস্থ্য হওয়ার পর থেকে জীবণ চালানোর তাগিদে তিনি ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নেন। সপ্তাহের ৭দিন এলাকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে যে ভিক্ষা ও সহায়তা পান তা দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে জীবণ অতিবাহিত করেন।
সম্প্রতি ভিক্ষা করতে এলে নজিপুর চকনিরখিন মোড়ে কথা হয় আব্দুর রশিদের সাথে, তিনি জানান, মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকু ছাড়া তাঁর আর কিছু নেই। ভিক্ষা করার জন্য পরের কাছে হাত পাততে খুব খারাপ লাগে। কিন্তু নিরুপায় হয়ে আমাকে এই কাজ করতে হয়। স্ত্রী-সন্তানদের মুখের পানে চেয়ে আমাকে লাজ লজ্জা পরিত্যাগ করতে হয়েছে। যারা আমার অসহায়ত্বের কথা জানেন তাঁরা দেখলেই সহায়তা করেন। সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সংসার চালানোর মতো কোন অবলম্বর পেলে ভিক্ষাবৃত্তির মতো এই পেশা আমি ছেড়ে দিবো।