নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রধান এএমএম নাসির উদ্দিন, সংস্কার কমিশনের তিনটি সুপারিশ নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি বিশেষ করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির হাতে ইসির তদন্তভার, সীমানা পুননির্ধারণ এবং ভোটার তালিকা পরিচালনার জন্য পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের সুপারিশের সমালোচনা করেছেন। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে ইসির স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন জানান, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার স্বার্থে, এসব সুপারিশ গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। আমাদের এই স্বাধীনতার মধ্যে অন্য স্বাধীনতা সংযোজন করলে আরও জটিলতা তৈরি হবে। সীমানা পুনর্নির্ধারণের ক্ষমতা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের হাতে দিয়ে দিলে তা ইসির কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করবে এবং নির্বাচনের সময়সীমা প্রভাবিত হতে পারে। ভোটার তালিকার হালনাগাদ ও সীমানা পুননির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অন্য প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপ ইসির সাংবিধানিক ম্যান্ডেটের বিরুদ্ধে।’’
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘‘ভোটার তালিকা ও সীমানা পুননির্ধারণে স্বাধীন কর্তৃপক্ষের গঠন ইসির স্বাধীনতা এবং কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এ ধরনের সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে না এবং জাতীয় নির্বাচন সময়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও ব্যাহত হতে পারে।’’
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গত ১৫ জানুয়ারি তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো— ১) নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটির অধীনে তদন্তের ব্যবস্থা, ২) ভোটার তালিকা ও সীমানা পুননির্ধারণের জন্য স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ গঠন, ৩) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংস্থার স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা।
আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সিইসি জানান, নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করতে অক্টোবর পর্যন্ত সময় হাতে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনী আইনের কিছু খসড়া প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনও অপেক্ষমাণ। নির্বাচনী কাজের গতিশীলতা বজায় রাখতে সময়মতো আইন ও বিধি সংশোধন অত্যন্ত জরুরি।’’
এছাড়া, সিইসি ইসির বাজেট এবং জনবল নিয়ন্ত্রণও সংসদীয় কমিটির হাতে না দেওয়ার সুপারিশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ইসির কাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ আমাদের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।’’
নাসির উদ্দিন আরও জানান, সংস্কার কমিশনের তিনটি সুপারিশ ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। এনআইডি সেবা ইসির অধীনে আনা এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সম্মানিভাতা কমিটি গঠনের মতো ছোটখাটো সুপারিশ ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে।