প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাবে শিক্ষাবঞ্চিত প্রতিবন্ধীরা

এফএনএস : | প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৭:৩০ পিএম
প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাবে শিক্ষাবঞ্চিত প্রতিবন্ধীরা

প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী সম্বন্ধে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি এবং দায়িত্ববোধের পরিবর্তন লক্ষণীয়। দেশে সামগ্রিক বা সর্বাত্মক উন্নতির জন্য সর্বস্তরের মানুষের শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রবহমান উন্নয়ন বা বিস্তার প্রয়োজন। আমাদের দেশের প্রত্যেক শ্রেণির মানুষ অর্থাৎ উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত অথবা দরিদ্র সীমার নিচে বাস করে এমন মানুষের মাঝে নানা প্রতিবন্ধী শিশু-নারী-পুরুষ রয়েছে, যাদের বিষয়ে সহযোগিতার মানসিকতা সবস্তরেই এক নয়। প্রতিবন্ধী মানেই যেন অবহেলা আর দয়ার সহাবস্থান, যে সমস্ত পরিবার বা ব্যক্তি নানা চড়াই উতরাই পার করে শিক্ষার জন্য স্বাভাবিক জীবনের বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য এগিয়ে আসেন কিন্তু তারা খুঁজে পান না সু-নির্ধারিত প্লাটফর্ম। একজন স্বাভাবিক শিশুর শিক্ষা এবং একজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর শিক্ষার পরিধি এক নয়। প্রতিবন্ধীদের যতটুকু যত্ন-সহযোগিতা প্রয়োজন ততটুকু পূরণের কাছে যাওয়া এখনো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। প্রতিবন্ধীরা কঠিন প্রতিবন্ধকতায় রয়ে গেছে; প্রত্যেকটি পরিবারের মধ্যে এখনো সচেতনতার অভাব। দারিদ্র্য যাদের নিত্যসঙ্গী তাদের কাছে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা যেন একটি বিলাসিতা মাত্র। যে-সব সৌভাগ্যবান প্রতিবন্ধীরা তাদের পরিবারের একান্ত চেষ্টায় সকলের দয়া-দাক্ষিণ্য, অবহেলা এবং করুণার দৃষ্টি উপেক্ষা করে এগিয়ে আসেন, তাদেরও কোথাও এসে থেমে যেতে হয়। কারণ, সমাজের মূলধারার শিক্ষা ও স্কুলগুলোতে সব ধরনের চলাচলের যথেষ্ট ঘাটতি ও কমতি রয়েছে। শিক্ষার অধিকার, মৌলিক অধিকার হলেও এখনো দেশে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় বিষয়টা কল্যাণের দৃষ্টিতে দেখা হয়। সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগের পরও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের একীভূত শিক্ষায় আনা কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবকাঠামো ও প্রতিবন্ধীদের জন্য উপযোগী শিক্ষকের অভাব লক্ষণীয়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতি বইসহ শিক্ষকের ব্যবস্থা থাকলেও শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপযোগী শিক্ষক নেই। ফলে এই স্তরের শিক্ষার্থীরা কিছুদিন স্কুলে গেলেও ক্লাসের পাঠ বুঝতে না পেরে পড়ালেখায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশে আইন ও সরকারি নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য শিক্ষার উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়নি। বেশিরভাগ বিদ্যালয়েই তাদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা থাকে না। গণপরিবহনের যাতায়াতে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাথরুম তাদের ব্যবহারের উপযোগী নয়। এমনকি সহপাঠী ও শিক্ষকদেরও প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে আচরণে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। ফলে সব ক্ষেত্রেই তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। ‘আমার দেশে একটা আইন আছে যে, বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিটি শিশুকে স্কুলে ভর্তি করতে হবে। কিন্তু সেখানেও একটা ফাঁক রয়েছে। এজন্য আমাদের মানবিকভাবে চিন্তা করতে হবে। তৈরি করতে হবে আলাদা পাঠ্যসূচি ও শিক্ষক। স্কুলে এসেই তারা পাবে বিভিন্ন সেবা। তাই সকল ধরনের সকল মাত্রার প্রতিবন্ধী শিশুকে স্কুলগামীকরণে প্রয়োজন একীভূত ও বিশেষায়িত শিক্ষা ব্যবস্থার সমন্বয়। এ প্রেক্ষিতে বর্তমান সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগে দেশের প্রতি উপজেলায় কমপেক্ষ একটি করে বিশেষায়িত বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য শিক্ষার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW