বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য বেকারত্ব রীতিমতো মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে শিক্ষিত-অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অগণিত। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তরুণ, প্রত্যেকেই কর্মক্ষম হলেও নেই পর্যাপ্ত কর্মস্থল। বেকারত্ব নামক অভিশাপের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে এ দেশের বৃহৎসংখ্যক তরুণ। দেশে স্নাতক পাস বেকারের সংখ্যা গত নয় বছরে তিন গুণ বেড়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ২০১৩ সালে দেশে মোট বেকারের ৯ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল উচ্চশিক্ষিত। ২০২২ সালে এসে তা ২৭ দশমিক ৮ শতাংশে পৌঁছায়। শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ চাকরি পেতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে। বাংলাদেশে মোট জনশক্তির মধ্যে ৫ ভাগের সামান্য বেশি সরকারি চাকরির সুযোগ পায়। অথচ বেসরকারি খাতে যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। বর্তমানে দেশে অনুমোদিত পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা ১৬৯। এর মধ্যে শিক্ষার্থী সংখ্যার বিচারে সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় হলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বিদ্যার্থীর সংখ্যার ভিত্তিতে এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির ২ হাজার ২৮৩টি অধিভুক্ত কলেজে পড়েন প্রায় ৩২ লাখ শিক্ষার্থী। সে হিসাবে দেশে উচ্চশিক্ষায় যত শিক্ষার্থী আছেন, তাঁদের প্রায় ৭২ শতাংশই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে মানবিক বিভাগের ৭৪ শতাংশ কলেজ গ্র্যাজুয়েট বেকার থাকলেও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে এ হার ৭১ শতাংশ। এ ছাড়া বিজ্ঞানের ৬৬ শতাংশ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ৬৯ শতাংশ কলেজ গ্র্যাজুয়েট বেকার থাকছেন। কেননা অধিভুক্ত বেশির ভাগ কলেজে নেই পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক, অবকাঠামো, গবেষণাগার ও গ্রন্থাগার। এ ছাড়া শিক্ষাক্রমে সমসাময়িক জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব, ভর্তিবিহীন অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি, ইংরেজি ভাষার দক্ষতার ঘাটতি, এসব কারণে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে তাঁরা চাকরির প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন। অসংখ্য শিক্ষার্থী আছেন যাদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পাচ্ছে না। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ভাগ্যের পরিবর্তন না হওয়ায় দিনশেষে হতশ্রী মুখ নিয়ে ঘরে ফিরতে হচ্ছে অজস্র বেকার তরুণদের। এতে করে বেশিরভাগ শিক্ষিত বেকার তলিয়ে যাচ্ছে হতাশার অতল গহ্বরে। তাই দেশের বেকারত্ব সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তবেই আলোর মুখ দেখতে পারে এ দেশের বেকার জনগোষ্ঠী। বেকারত্ব নামক অভিশাপ থেকে স্থায়ী মুক্তির জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিকল্প নেই। কর্মসংস্থানের জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রাইভেট সব খাতে নজর দিতে হবে। যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষায় জোরদারের পাশাপাশি বেকারদের উদ্যোক্তা হতে অনুপ্রাণিত করতে হবে। সেইসঙ্গে সরকারি চাকরিতে বছরের পর বছর পড়ে থাকা শূন্য পদগুলো পূরণ করা জরুরি।