সমালোচনার মুখে সেই পোস্টার সরাল বাংলা একাডেমি

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশ: ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৭:৫৯ পিএম
সমালোচনার মুখে সেই পোস্টার সরাল বাংলা একাডেমি

অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে প্রদর্শিত একটি পোস্টার নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে অবশেষে সেটি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ উঠেছে, পোস্টারে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের চেতনা তুলে ধরতে গিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের একটি ঐতিহাসিক ছবি, যা ইতিহাস বিকৃতির শামিল।

‘৫২–এর চেতনা ২৪–এর প্রেরণা’ শিরোনামে তৈরি করা পোস্টারটি টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্থানে লাগানো হয়। এতে দেখা যায়, কিছু তরুণী ও নারী প্ল্যাকার্ড হাতে বসে আছেন, যেখানে লেখা ‘মা বোনেরা অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’। এই ছবিটি ১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারীদের করণীয় নির্ধারণে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশের দৃশ্য। ছবিতে বাঁশের লাঠি হাতে বসে থাকা নারী হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ফেরদৌস হক লিনু।

কিন্তু পোস্টারটি ভাষা আন্দোলনের চেতনা প্রতিফলিত করতে ব্যবহারের ফলে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সমালোচনার ঝড় ওঠে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ফেরদৌস হক লিনু ফেসবুকে এই পোস্টার ব্যবহারের প্রতিবাদ জানিয়ে লেখেন, ‘সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এই ছবি ব্যবহারের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ১৯৭১–এর ছবি ৫২–এর ছবি বলে উল্লেখ করছে, ধিক্কার জানাই। ছবিতে লাঠি হাতে আমি। ১৫ মার্চ ১৯৭১–এর ছবি। তাদের ইতিহাস সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা নেই। ৫২–তে স্বাধীনতার স্লোগান ছিল না। রাষ্ট্রভাষা মাতৃভাষা বাংলার স্লোগান ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ শহীদ মিনারে নারীদের করণীয় নিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যার নেতৃত্বে ছিলেন সুফিয়া কামাল। এই ছবিটি তুলেছিলেন আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদার। এটি প্রথমবার পাক্ষিক ‘চিত্রালী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।’

বিতর্কের মুখে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘প্রথম কথা, এটি বাংলা একাডেমির পোস্টার নয়, তবে বইমেলার পোস্টার। আমাদের মেলা আয়োজনকারীদের পক্ষ থেকে এটি তৈরি করা হয়নি। অন্য একটি পক্ষ এটি করেছে, যা আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়েছে। তবে আমরা জানার সঙ্গে সঙ্গে পোস্টারটি সরিয়ে নিয়েছি।’

বাংলা একাডেমির এক কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, ‘পোস্টারটি শুধু একটি জায়গায় নয়, বরং টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত পুরো পথেই লাগানো হয়েছিল। পোস্টারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নাম থাকলেও এটি সম্ভবত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের ভুল।’

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিহাস বিকৃতির বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও ভবিষ্যতে এই ধরনের ভুল এড়াতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে। ইতিহাস সচেতনতার অভাব এবং ভুল তথ্য প্রচারের কারণে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে বলে অনেকেই মত প্রকাশ করেছেন।

বাংলা একাডেমির উচিত ভবিষ্যতে বইমেলার মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত সমস্ত উপকরণের নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা, যাতে এমন ভুল আর না ঘটে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে