কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রাচীরের পাশেই ময়লার ভাগাড়, দূগন্ধে স্থানীয়দের দুর্ভোগ

এফএনএস (টিপু সুলতান; কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ) : | প্রকাশ: ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৪:০৩ পিএম
কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রাচীরের পাশেই ময়লার ভাগাড়, দূগন্ধে স্থানীয়দের দুর্ভোগ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রাচীরের পাশেই ময়লার ভাগাড়। পৌরসভা কমিউনিটি ভবন সংলগ্ন শিবনগর বোষ্টমপাড়া এলাকায় বছরের পর বছর ধরে বর্জ্য ফেলে আসছেন কালীগঞ্জ পৌরসভাসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে করে দূগন্ধে পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলে আসলেও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে, আবর্জনা ও ময়লার কারণে ড্রেনের পানি প্রবাহেও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। বিষাক্ত পানি আটকে গিয়ে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় আর শুষ্ক মৌসুমে দুর্গন্ধ প্রকট হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। এলাকাবাসী বার বার অভিযোগ দিলেও আবর্জনার ভাগাড় নিয়ে সুষ্ঠু কোনো সমাধান করতে এগিয়ে আসেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। বুধবার (৫ ফেব্রয়ারী) সরেজমিন দেখা যায়, পৌরসভার প্রচীরের সরু রাস্তার পাশের ড্রেন আর ড্রেনের পাশে আবর্জনার স্তুপ করে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন সকালে পৌরসভার কর্মচারীরা তাদের ময়লার ভ্যান নিয়ে এসে সহযোগীদের মাধ্যমে বর্জ্য ফেলছেন। স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন পৌরসভা এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে আনা বর্জ্য এখানে ফেলা হয়। এছাড়া স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কারখানার বর্জ্যগুলোও বছরের পর বছর ধরে এখানে ফেলা হচ্ছে। এক যুগের বেশি সময় ধরে আমাদের একমাত্র চলাচলে এই সরু রাস্তার পাশে আবর্জনা স্তুপ করে রাখা হয়েছে। অথচ এখান থেকে আবর্জনা পরিষ্কার করেন না পৌরসভার কর্মীরা। সড়কটি এখন ময়লার ভাগাড়ে রূপ নিয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ বেআইনিভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আবাসিক এলাকায় আবর্জনা ফেলছেন। তাদেরকে অনুরোধ করলেও কোন কাজ হয় না।স্থানীয় বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া জানান, আবর্জনার দুর্গন্ধে এই পথ দিয়ে যাওয়া আসা খুবই কষ্টকর। ড্রেনের জমে থাকা পচা পানির দূর্গন্ধে সবারই দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠেছে এ ময়লার ভাগাড়। বর্জ্য ফেলার স্থানের আশে পাশের এলাকাজুড়ে মানুষ ও পথচারিদের নাকে-মুখে রুমাল চেপে চলতে হয়।  এই মহল্লার মানুষের চলাচলের একমাত্র সরু রাস্তার পাশের ড্রেন এবং ড্রেনের ময়লা ফেলার কারণে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে  স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, এটা আমার বাসার সামনে হওয়ায় প্রতিনিয়ত খুব কষ্ট করে আমাদের যাওয়া আসা করতে হয়। ড্রেনের পচা পানির গন্ধ আর মশা-মাছির যন্ত্রণায় বাড়িতে থাকতে পারি না। শিশুদের অসুখ-বিসুখ লেগেই আছে। আবর্জনার স্তুপে আসা কুকুর মাঝেমধ্যে আমাদের পোষা প্রাণীদের আক্রমন করে। এটি তো ময়লা ফেলার জায়গা না। তবে পৌর কতৃপক্ষ ও স্থানীয় কিছু বাসিন্দারাও এখানে ময়লা আবর্জনা ফেলছেন প্রতিনিয়ত। আমরা অনেক বার অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি। আর এই রাস্তার পাশে বহু আগে পানি নিষ্কাশনের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ একটি ড্রেন খনন করে দিলেও সেই থেকে এই ড্রেন কোনদিন পরিষ্কার করতে দেখলাম না। যার কারণে ড্রেনের পচা পানির গন্ধে চলাচল করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। আমরা দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছি। আরেক বাসিন্দা শিবে অধিকারি বলেন, দুর্গন্ধে বাড়িতে বসবাস করতে পারছি না। শিশু-বয়স্ক সবাই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে। মশা-মাছির যন্ত্রণায় বাড়িতে খেতে বসা যায় না। খাবার তো বটেই খাবারের সময় মাছি গিয়ে মুখেও পড়ে। পৌর কর্তৃপক্ষের এসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই। আবাসিক এলাকায় কোন বিবেচনায় ময়লা ফেলছে তারা, তা বুঝে আসে না। আমরা এখান থেকে আবর্জনার স্তুপ অপসারণ চাই।দুর্গন্ধ আর মশা-মাছির যন্ত্রণায় এই এলাকায় বসবাস করা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে ওই এলাকার বাসিন্দা রাম অধিকারি বলেন, বিভিন্ন সময় আমরা অভিযোগ দিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না। পৌর কর্তৃপক্ষ যদি এসব না দেখেন, তাহলে কার কাছে যাবো। মানুষকে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে আবাসিক এলাকায় আবর্জনা ফেলা পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা বলে আমি মনে করি। পৌর কর্তৃপক্ষ ক্ষমতার অপব্যবহার করে আবর্জনা ফেলে এলাকাবাসীকে ভোগান্তিতে ফেলেছেন। মানুষজন দুর্গন্ধে বসবাস করতে পারছেন না। এ নিয়ে পৌরসভা অভিযোগ দিলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়না। কালীগঞ্জ উপজেলা পরিবেশবাদী শিবু পদ বিশ্বাস বলেন, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মানুষের চলাচলের রাস্তার পাশে বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণ না করার বিষয়ে পৌরবাসী অনেকদিন ধরেই পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়ে আসছেন। পৌরসভার বয়সও বহু বছর। শুধু একটা এলাকায় এমনটা হচ্ছে তা নয়, বিভিন্ন মহল্লা ও শহরের বিভিন্ন স্থানে এই ধরনের চিত্র আমাদের চোখে পড়ে কিন্তু পৌরসভা কতর্ৃৃপক্ষের চোখে পড়ে না, এ্টা আমার বুঝে আসে না। এ ধরনের জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পরিবেশ দূষণের শিকার হতে হয়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি এই বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলার মাসিক আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়েও কথা বলেছি। আশা করবো পৌর কর্তপক্ষ এই বিষয়টা আমলে নিয়ে সমাধানে এগিয়ে আসবেন। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ পৌরসভার সচিব আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, আসলে ওখানে শুধু পৌরসভার ময়লা অবর্জনা ফেলা তা নয়, স্থানীয় বাসিন্দারাও ময়লা ফেলে ড্রেন ও ড্রেনের পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলছেন। তবে এ ব্যাপারে পৌরসভার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদেরও সচেতন হওয়া জরুরী। আমি খুব দ্রুত ময়লা এবং ড্রেন পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করবো।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে