অপরাধের বেড়াজালে সমাজ: প্রতিরোধের দিশা কোথায়?

এফএনএস : | প্রকাশ: ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৭:৩৫ পিএম : | আপডেট: ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৭:৩৫ পিএম
অপরাধের বেড়াজালে সমাজ: প্রতিরোধের দিশা কোথায়?

দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান অপরাধ প্রবণতা আজ আমাদের সমাজে গভীর শঙ্কার সৃষ্টি করেছে। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, দখল, মব জাস্টিস, সাইবার অপরাধ এবং প্রতারণার মতো অপরাধগুলোর প্রসারে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সামাজিক নিরাপত্তায় অশনি সংকেত বহন করে। অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশ বাহিনী নিরলস কাজ করলেও সীমিত সামর্থ্যরে কারণে অনেকক্ষেত্রেই তাদের অসহায় পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাব এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা না থাকা এই সংকট আরও গভীর করছে। সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনায় দেখা গেছে, অপরাধীর প্রতি মানুষের অসহিষ্ণু মনোভাব ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। সামান্য অপরাধের জন্য কাউকে পিটিয়ে হত্যা করা কিংবা আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা ইঙ্গিত দিচ্ছে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের। উদাহরণস্বরূপ, গাজীপুরে হাসিবুল ইসলামকে কিশোর গ্যাংয়ের নৃশংস হামলা কিংবা ঠাকুরগাঁওয়ে রুবেলকে গাছে বেঁধে হত্যা, এগুলো একদিকে সমাজের সহিংস মনোভাবকে উসকে দিচ্ছে, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ঢাকার মতো মহানগরে ছিনতাই একটি নিত্যদিনের আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। রাজধানীর পুলিশ সূত্র জানাচ্ছে, প্রতিদিনই নতুন নতুন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে, যেগুলোর বেশিরভাগই কিশোর গ্যাংদের মাধ্যমে সংঘটিত। এসব গ্যাংয়ের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশ থাকায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। পাশাপাশি, জামিনে মুক্তি পাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরা অপরাধে ফিরে যাওয়ার প্রবণতাও পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করছে। অপরাধের আরেকটি নতুন ধারা সাইবার জগৎ। ফেসবুক ও অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণা চালানো, ব্যক্তিগত আক্রমণ বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা সাইবার অপরাধের ভয়াবহ রূপ। বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরাধীরা অনলাইনে নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে ফেলে আরও সংগঠিত হচ্ছে, যা নিয়ন্ত্রণ করা এক বড় চ্যালেঞ্জ। অপরাধপ্রবণতার মূলে রয়েছে নৈতিক অবক্ষয়, পারিবারিক শিক্ষার অভাব এবং সমাজের সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। কিশোর অপরাধ বাড়ার পেছনে পরিবারের ভূমিকা, অসচেতন অভিভাবকত্ব এবং বেপরোয়া আচরণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা অনেকাংশে দায়ী। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানো, কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে জোরদার করা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সাইবার অপরাধ দমন ইউনিটের আরও উন্নতি প্রয়োজন। পাশাপাশি, সমাজে মূল্যবোধ ও সহমর্মিতার চর্চা বাড়াতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্বকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। অপরাধ দমনে কেবল আইন প্রয়োগ করলেই যথেষ্ট নয়; এর সামাজিক ও নৈতিক দিকগুলো বিবেচনায় নিয়ে একটি সুসংহত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে অপরাধের বেড়াজালে সমাজ আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। অপরাধ দমনে সমন্বিত উদ্যোগই পারে দেশকে নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW