৫ আগস্টের পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যার ঘটনায় সারা দেশে আড়াই হাজারের কাছাকাছি সংখ্যক মামলা হয়েছে। তবে ৬ মাস বেশি অতিবাহিত হলেও কোনো মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। মামলার তদন্তের বিষয়ে পুলিশের একটি পক্ষ মনে করছে, অভ্যন্তরীণ রদবদল, কর্মকর্তাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ এবং বিশ্বস্ততার জায়গায় যেতে না পারা এ বিলম্বের বড় কারণ। আর আইনজীবীদের ভাষ্য, বেশির ভাগ আসামির ক্ষেত্রে ‘হুকুমদাতা-নির্দেশদাতা ও ইন্ধনকারী’ উল্লেখ করায় এসব মামলা প্রমাণ করে বিচার নিশ্চিত করা খুবই কঠিন। এছাড়া ঢালাও মামলা ও আসামি বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে। তবে অযথা কাউকে হয়রানি করা হবে না বলেও পুলিশপ্রধানের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে। এজন্য জুলাই-আগস্টের মামলার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মামলাগুলোর উল্লেখযোগ্য অভিযোগ হচ্ছে-আন্দোলনের সময় নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা নির্বিচারে গুলি চালিয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি ও সরকারি কর্মকর্তারা এতে হুকুমদাতা, অর্থদাতা ও পরিকল্পনাকারী বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এসব মামলায় শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাসহ আসামি করা হয়েছে প্রায় দেড় লাখ মানুষকে। এর মধ্যে দলটির শতাধিক নেতাসহ প্রায় ১২ হাজার আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন শতাধিক কর্মকর্তাকেও বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হয়েছে। সাবেক ও বর্তমান ২৮ কর্মকর্তা কারাগারে আছেন। তবে এখন পর্যন্ত মামলাগুলোর তদন্তের কাজ শেষ হয়নি। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, শুরুতেই ঢালাও মামলা দেওয়া, গণহারে আসামি (কোনো কোনো ক্ষেত্রে একাধিক মামলায় একই আসামি) এবং গৎবাঁধা অভিযোগ তদন্ত কার্যক্রমকে গোড়াতেই দুর্বল করে দিয়েছে। ফলে এসব মামলা আদৌ টিকবে কিনা, সে আশঙ্কা থেকেই যায়। আর সেটি হলে প্রকৃত অপরাধীরা যেমন পার পেয়ে যাবে, তেমনি স্বজনহারা পরিবারগুলো সুষ্ঠু বিচার থেকে বঞ্চিত হবে। কাজেই মামলাগুলোর যৌক্তিকতা পুনরায় খতিয়ে দেখা উচিত। অন্যথায় তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে শেষ পর্যন্ত বিচার নিশ্চিত করাও কঠিন হয়ে উঠতে পারে। আবার বিনাবিচারে আটককৃতদের দীর্ঘদিন বন্দি রাখা হলে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা, সে প্রশ্নও দেখা দেবে। এমতাবস্থায় সরকারকে বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে।